1. live@dailytrounkhota.com : news online : news online
  2. info@www.dailytrounkhota.com : দৈনিক তরুণ কথা :
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০৯ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
পুটি মাছ কাটা নিয়ে বিবাদ, স্বামীর হাতে প্রাণ গেল স্ত্রীর: এলাকায় শোকের ছায়া মনোহরগঞ্জে যৌথবাহিনীর অভিযানে নারীসহ ৩ মাদক ব্যবসায়ী আটক মনোহরগঞ্জে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১টি দোকান ভূষ্মীভূত মনোহরগঞ্জে জামায়াতের প্রীতি সমাবেশ ডেটলাইনের মধ্যে সংস্কার করে নির্বাচন দেন: জামায়াতের সেক্রেটারি শতরূপা ফাউন্ডেশনের চিকিৎসা সহায়তা পেলো, মাদারীপুরের নাছিমা আক্তার। তৃণমূল থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিএনপি, কর্মীদের প্রত্যক্ষভোটে হচ্ছে কমিটি গঠন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্থার ও বিচার কার্যক্রম শেষে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবেঃ অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার শতরূপা ফাউন্ডেশনের চিকিৎসা সহায়তা পেলো,ময়মনসিংহের সিদরাতুল মুনতাহা চ্যাম্পিয়ন মির্জাপুর স্পোর্টিং ক্লাব।

জলে ভেসে যায় স্মৃতিময় কাগজের নৌকো -সুনির্মল বসু

এম.এ.মান্নান.মান্না:
  • প্রকাশিত: শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৩১ বার পড়া হয়েছে
গোলাপ বিছানো পথে হাঁটিনি কখনো, বরং মেঠো পথে সজনে ফুল পড়ে আছে, কতদিন এখান দিয়ে হেঁটে গেছি। সেই পথ বহুদিন পেছনে ফেলে এসেছি, অথচ, স্মৃতির মধ্যে জেগে আছে সেই পথ, সেই পথের পাশে দেখা মানুষজন, তাদের কথাবার্তা, তির্যক ভালোবাসা, সবকিছু।
স্মৃতির স্বভাব হলো এই সে কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করে না। আগের কথা পরে, পরের কথা আগে চলে আসে।
আমার ঠাকুমা চারুশীলা মিত্রের কথা খুব মনে পড়ে। কী ভালো যে বাসতেন! সেই মায়াময় ডাক আজও ভুলতে পারিনি।
আজ এই বয়সে পৌঁছে আমার মনে হয়, অভাবের দিনগুলো বড় ভালো ছিল। আমরা একে অন্যকে জড়িয়ে বড় হচ্ছিলাম।
কী নিবিড় ভালোবাসা ছিল সংসারে।
বৃষ্টির দিনে সবুজ মাঠ জলে ভরে যেত। ব্যাঙের ডাক।
পুকুরে হাঁসেদের চৈ চৈ, গাছের ডালে সবুজ টিয়া পাখিদের বৃষ্টি স্নান, কী সব কবিতার মতো দিন।
সকাল থেকে বৃষ্টি। রান্নাঘরে মায়ের খিচুড়ি রান্না। মনে হয়, স্যার আজ পড়াতে আসবেন না।
না এলেই ভালো হয়।
সন্ধ্যেবেলায় ছাতি মাথায় হরেন বাবু এলেন। মায়ের পর আমার জীবনের প্রথম শিক্ষক তিনি। খুব ভালোবাসতেন। বড় গরীব। কবিতাকে ভালোবেসে ছিলাম, স্যারকে দেখে। কী সুন্দর করে ছবির মত পড়াতেন,
মৌমাছি মৌমাছি , কোথা যাও নাচি নাচি।
জানালা দিয়ে পুকুরের উপর বৃষ্টি পড়ার দৃশ্য আমি খুব উপভোগ করতাম। পুকুর পাড়ে জামরুল গাছের মাথা বাতাসে দুলতো, কাঠবাদাম গাছে কাঠঠোকরা পাখি গাছের কান্ডে ঠোকর দিত।
কোন কোন দিন বিকেল বেলায় বাঁশ বাগানের মাথায় ঢাউস ঈগল এসে বসতো। মাঠের ডানদিকে গাব গাছের দিকে দিনের বেলায় তাকাতে ভয় লাগতো।
সেখানে বীভৎস অন্ধকার। মনে মনে ভাবতাম, কোনদিন ওখানে যাব না। ভূত থাকতে পারে!
আকাশ ভর্তি ঘুড়ি। কত রঙের। কত তার নাম। আজও আমার সব চেয়ে পছন্দের খেলা হলো, ঘুড়ি ওড়ানো।
এবং তারপর ফুটবল।
মিনু পিসি বাংলা নিয়ে পড়তো। আমি যখন বাংলা নিয়ে কলেজে ভর্তি হলাম, মিনু পিসি বলেছিল,
ভালোবেসে পড়বি, কোন চাপ নিবি না।
স্কুল ম্যাগাজিনে জীবনের প্রথম লেখাটি ইংরেজিতে লিখেছিলাম। ছাপা হয়েছিল।
স্থানীয় আহ্বান পত্রিকায় শারদীয়া সংখ্যায় গল্প জমা দিলাম।
অনেক আশা নিয়ে বসে থাকলাম। পত্রিকা বের হলো। আমার নাম নেই।
সম্পাদিকা বকুল দিকে প্রশ্ন করলাম, দিদি, আমি পত্রিকায় নেই কেন?
তোকে অনেক ভালো লিখতে হবে। তোর লেখার হাত এখনও পাকে নি।
সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। কাউকে বলতে পারিনি। সব কষ্ট সব সময় বলা যায় নাকি!
পরের বছর আবার লেখা দিলাম। পত্রিকা খুলে দেখি, প্রথমেই আমার লেখা।
গল্পের নাম, মনোবাসিতা। এটাই আমার জীবনের প্রথম ছাপা গল্প।
রাতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ক্রাচে ভর করে একজন লেখক তাঁর প্রেমিকাকে নিয়ে ভেবে চলেছেন। সেই থেকে প্রেমের গল্প লেখার শুরু।
জীবনে সমস্যা আছে জানি। কিন্তু প্রেম আর প্রকৃতি নিয়ে লিখে আমি কখনো ক্লান্ত হই না।
এবার বকুলদি একদিন ডেকে বললেন, ভালো লিখতে হলে, প্রচুর পড়তে হবে।
বাটা রিক্রিয়েশন ক্লাবের মেম্বার ছিলেন বাবা। প্রতিদিন গোগ্রাসে বই পড়েছি। ওদের ম্যাগাজিনে
গল্প লিখেছি, সাগর চোখের ভালোবাসা, পলাশ বনে বিকেল, শ্রেণী শত্রু, ভালোবেসে কি পেলাম, শঙ্খ নদীর তীরে প্রভৃতি গল্প।
আমাদের কলেজের পাশেই বসুমতী পত্রিকার অফিস। লেখা দিতে গিয়ে বেশ মনে আছে, একবার যুগান্তর পত্রিকার নাম করা সাংবাদিক রমেন দাস
বসুমতী পত্রিকার সম্পাদককে বলছিলেন, নিউজ আমার কাছে আছে, মাল ছাড়ুন, এখনই দিয়ে দিচ্ছি।
নিজের চোখে এই প্রথম একজন সাংবাদিককে দেখলাম। তখন একবার আমার সাংবাদিক হবার ইচ্ছে হয়েছিল।
আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক ছিলেন আমার মায়ের মামা সুদেব রায় চৌধুরী।
ওনাকে আমার ইচ্ছের কথা জানাতেই, উনি বলেছিলেন, প্রচন্ড দায়িত্বের কাজ, ও তুই পারবি না।
বিশু মুখোপাধ্যায় বসুমতীতে আমার অনেক লেখা
ছেপেছিলেন ছোটদের পাতায়। বড়দের পাতায় লেখাগুলো বেরিয়েছিল শ্রদ্ধেয় প্রণবেশ চক্রবর্তীর সৌজন্যে।
উত্তরবঙ্গ সংবাদে আমার গল্পগুলো মনোনয়ন পেয়েছিল লেখক সুধী রঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের হাত ঘুরে। যুগান্তরে আমার লেখা মনোনীত হয়েছিল শ্রদ্ধেয় অমিতাভ চৌধুরী এবং
লেখক শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের মাধ্যমে। পার্থ বসু
আনন্দবাজার পত্রিকায় আনন্দমেলার পাতায় আমার লেখা প্রকাশ করেছিলেন।
লেখার কথা থাক। সাহিত্যের আড্ডার কথায় আসি। বাটানগরে হোস্টেলের মাঠে পাম গাছের তলায় প্রতি রবিবার সকাল ১০:০০ টায় সাহিত্য সভা বসতো। ডক্টর দীনেশচন্দ্র সিংহ, রত্নেশ্বর বর্মন,
পিনাকী রঞ্জন গুহ, প্রভাস কান্তি ভদ্র আরো অনেকে এই সভায় যোগ দিতেন। পরবর্তীকালে এরা প্রত্যেকেই প্রথম শ্রেণীর কাগজে লিখেছেন।
একসময় সু তৃপ্তির মিষ্টির দোকানে সাহিত্যের আড্ডা বসতো। বেহালা থেকে আসতেন কবি তেজেশ অধিকারী।
উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকার অফিসে আলাপ হয়েছিল কবি গৌরাঙ্গ ভৌমিক, লেখক সমীর রক্ষিত এবং নোবল জয়ী অর্থনীতিক অমর্ত্য সেনের
বোন সুপূর্ণা দত্তের সঙ্গে। যথেষ্ট সমৃদ্ধ হয়েছিলাম।
মনে পড়ে, ঘুড়ি ওড়ানোর বন্ধু সিরাজদা, স্নেহময়ী মানিক মিস্ত্রির পিসিমা, অঞ্জুদি, বিশ্বনাথ কাকু, নীরোদ কাকু, আরো কতজনকে।
আমার মধ্যে লেখার ইচ্ছেটা এসেছিল, প্রথমত,
আমার মায়ের কাছ থেকে। আমার বরাবর স্বভাব ছিল, সবকিছু মাকে বলা। মাকে না বললে, আমার শান্তি হতো না।
কোন অন্যায় করলে, মায়ের পা ধরে বলতাম, মাগো, ভুল হয়ে গেছে।
তাঁর সেই মায়াময় হাসিটা আমার সব অপরাধ- নিমেষে ক্ষমা করে দিতে পারতো।
ছোটবেলায় বাবাকে খুব ভয় পেতাম। বড় হয়ে তিনি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে গেলেন। ছুটির দিনে দুপুরবেলায় আমার পাশে এসে বসতেন। আমি বাবার হাতের উপর হাত রাখতাম। পরম ভরসা ছিলেন আমার জীবনে তিনি।
জীবনে যদি কখনো কোনো ভালো কাজ করে থাকি, সবটাই মা-বাবার কাছ থেকে পেয়েছিলাম। সংবেদনশীল মন মার কাছ থেকে পাওয়া। জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার জন্য লড়াই, এটা আমাকে বাবা শিখিয়েছিলেন।
কোথায় কথা শুরু করেছিলাম, কোথায় চলে এলাম। আসলে, জীবনের কথাগুলো গুছিয়ে বলা শক্ত। অনেক সময় তা বলাও যায় না। প্রবল আবেগ
অন্যদিকে ঠেলে দেয়।
যেমন, আমার কাকু, আমার চেয়ে তিন বছরের বড়। কতদিন আমার মনে হয়েছে, শুধু আমার কাকুকে নিয়ে আমি একটা বই লিখতে পারি। আসলে, সে ছিল আমার দাদার মতো। পাখি ধরা, জামরুল পাড়া, গাব এনে খাওয়ানো, এসব ছিল কাকুর কাজ। নিজের চেয়ে কাকু বেশি ভালোবাসতো আমাদের। ওর কথা ভাবলে, বুকটা খা খা করে ওঠে। কতদিন হল, কাকু পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছে। যেখানে গিয়েছে, সেখান থেকে মানুষ কখনো ফিরে আসে না।
জীবনে কি পেয়েছি, কি পেলাম না, তাই নিয়ে কোনো ক্ষোভ রাখিনি মনে। অনেক পেয়েছি। আমার যোগ্যতার চেয়ে অনেক অনেক বেশি পেয়েছি। আর এই অভিজ্ঞতাই তো আমার সারা জীবনের সঞ্চয়।
লিখতে গেলে, খুব একটা ভাবতে হয় না। আপনি কলমের মুখে কথা এসে যায়।
মানুষ দেখেছি অনেক। ভালো-মন্দ মিশিয়ে। মন্দ টাকে মনে রাখতে চাই না। ভালো টুকু বুকের মধ্যে যত্নে ধরে রাখি। স্কুলে শেখাতে গিয়ে, শিখেছি অনেক। কৃতজ্ঞ সবার কাছে।
রবীন্দ্রনাথের গানের লাইন খুব মনে আসে আজকাল।
আপনাকে জানা আমার ফুরাবে না।
মেঘে মেঘে বেলা বয়ে গেল। সকালবেলায় উঠোনে ফুল দেখে ঘুম ভাঙতো, দুপুরে স্কুলে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মজা করে দিন কেটে যেত, বিকেলে ঘুড়ি উড়িয়ে ফুটবল খেলে কাদা মেখে বাড়ি ফিরতাম।
বাবা ইংরেজি পড়াতে বসতেন। বাবা বাড়ি না থাকলে, ভাই বোন মিলে গল্প করতাম। বাবার পায়ের শব্দ পেলে, গলা ছেড়ে পড়তাম।
ভাবলে হাসি পায়। কী ছেলেমানুষী। তবু, সোনার দিনগুলো পেছনে চলে গেল। ওরা আজও আমার কাছে আসে। চুপি চুপি বলে, মনে পড়ে? কিছু কি মনে পড়ে?
সন্ধ্যে হয়ে আসছে। আকাশে তারা। আকাশে চাঁদ।
আমার ভেতরে তাড়া আছে। কত কথা বলতে পারিনি। ঈশ্বরকে বলি, প্লিজ, আমাকে স্টেজ থেকে নামিয়ে দেবেন না, আমাকে একটু বলতে দিন।
বক্তব্য অসমাপ্ত রেখে, আমি এখনই স্টেজ থেকে নেমে যেতে চাই না।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট