এক শিক্ষক পাঠদানের সময় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার নির্যাতন, আর্মি হত্যা এবং বিগত সরকারের ‘আয়না ঘর’ নিয়ে আলোচনা করেন। এ খবর পেয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ওই শিক্ষককে শ্রেণিকক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে মামলা দেয়ার হুমকি দেন এবং সকল শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীর সামনে কান ধরে উঠবস করান বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনা জানাজানি হলে বুধবার (২১ আগস্ট) সকাল ১০টার পর স্থানীয় ছাত্র-জনতা ও এলাকাবাসী চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস ঘেরাও করে এবং প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ ও বিচার দাবিতে মিছিল ও স্লোগান দেয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষক শাহ মো: জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, “বিগত ৩৫ বছর ধরে আমি এ বিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষক। মঙ্গলবার সোয়া ১০টায় ক্লাস ঘণ্টা শুরু হলে আমি নবম শ্রেণীতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হাজিরা ডাকছি। হঠাৎ আয়া এসে আমাকে ক্লাস থেকে অফিসে ডেকে নিয়ে আসেন। অফিসে আসার পর প্রধান শিক্ষক শফিউল আলম স্যার আমাকে বলেন, ‘গতকাল আপনি ক্লাসের মধ্যে শেখ হাসিনাকে গালি দিছেন, ছাত্র-ছাত্রী আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিছে। আপনি কে শেখ হাসিনাকে গালি দেয়ার, কত সরকার আসবে যাবে, আপনার গালি দেবার অধিকার নেই।’ আমি বললাম, ‘আমি তো কাউকে গালি দি নাই। আমি পড়াইতে ছিলাম ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালের পাক হানাদারদের নির্যাতনের ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ ঘটনা বলতে গিয়ে আমার হঠাৎ আয়না ঘরের কথা মনে পড়ে গেল। তখন আমি আয়না ঘরের কিছু কথা আলোচনা করে বলেছিলাম শেখ হাসিনা সরকারের আয়না ঘরের নির্যাতন আর হানদার বাহিনীর নির্যাতনের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? এছাড়া আমি আর্মি হত্যা, সৈরাচারী এরশাদ সরকারের কথাও বলেছি।”
শাহ মো: জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন, “তখন নাছির উদ্দীন স্যার আমাকে বলেন, ‘আপনি তো জামায়াত-বিএনপি না, আপনি কে এগুলো বলার ‘ তখন আমি বলি, ‘আমি জামায়াত, বিএনপি, আওয়ামী লীগ না, আমি একজন শিক্ষক।’ তখন নাছির স্যার বলেন, ‘আমি আপনাকে ৪-৫টা মামলা দেবো। একটি খাগড়াছড়ি, একটি ভোলা, বরিশাল ও চট্টগ্রামে।’ তিনি ক্ষেপে গিয়ে আরো বলেন, ‘এখন ওনাকে মোছলেখা দিতে হবে, ওনাকে একটা শোকোছ দিতে হবে ও ওনার বিরুদ্ধে শিক্ষা অফিস, ইউএনও জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে আরো তিনটা অভিযোগ পাঠাতে হবে।’ পাঁচজন টিচার- হারুন, জামাল, মৌলভী সওকত, নাছির ও প্রধান শিক্ষক সবাই আরো কত নাজেহাল করার পর হেড স্যার আমাকে বলে, ‘আপনাকে এখন জুতা পেটা করে বের করে দেবো, আর এখানে আসতো দেবো না।’ তখন আমি বলেছি, ‘আমি ক্লাসে ছাত্রদের শিক্ষার জন্য যা বলেছি তার জন্য ক্ষমা চাই।’ তখন আমাকে হারুন স্যার বলেন, ‘আপনি প্রধান শিক্ষকের পা ধরে মাফ চান।’ আমি পা ধরিনি, তখন প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আপনি কান ধরেন।’ তখন সবার সামনে আমি কান ধরলাম। এ সময় মনে হয় আমি মরে গেছি।”
এদিকে মিছিল ও স্লোগানে উত্তাল স্কুলে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেনাবাহিনী পৌঁছে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে অবরুদ্ধ বিদ্যালয় অফিসে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সভাপতিত্বে জরুরি বৈঠক বসে। বৈঠকে উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনার পর দোষী প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ করেন।