বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, দীর্ঘ সতের বছর পর আমরা লাকসামে উম্মুক্ত পরিবেশে কর্মী সম্মেলন করতে পেরে মহান রবের দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। সতেরটি বছর আমাদের বাংলাদেশ শেখ হাসিনা নামক একটি জগদ্দল পাথরের নিচে চাপা ছিলো। ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের গণআন্দোলনের মাধ্যমে বাঙ্গালী জাতি জালিমের জুলুম থেকে মুক্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনের নামে বাঙ্গালী জাতির সাথে প্রহসনের মাধ্যমে তামাশা করেছে, বেঈমানি করেছে। ২০১৪ সালে নির্বাচন বিহীন ভোট করেছে, ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে করেছে, ২০২৪ সালে আমি আর ড্যামি নাটকের মাধ্যমে বারবার ক্ষমতায় এসেছিলো। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষিত সময়ের মধ্যে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের বিচার কার্যক্রম শেষ করেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল ) সকালে কুমিল্লার লাকসাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা শাখা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা শাখা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ সারাদেশে অসংখ্য নেতাকর্মীদের অন্যায় ভাবে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্যাতনে অসহ্য হয়ে পুরো বাংলাদেশ একটি অগ্নিগর্ব হয়ে উঠেছে। সারা দেশে ওলামায়ে কেরাম ও ধর্মীয় অনুভূতিতে বিশ্বাসী লোকদের জেল, জুলুম দিয়ে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতার মসনদে স্থায়ী হতে চেয়েছিলো। কিন্তু অন্যায়, জুলুম ও অত্যাচার করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। নির্মম পরিণতির মধ্য দিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে হয়েছে। শেখ হাসিনার এই পালায়ন থেকে সবাইকে শিক্ষা নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, কুরআান এবং সুন্নাহর আইন ছাড়া, মানব রচিত সংবিধান মানুষের কল্যাণ সাধিত করতে পারে না। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কুরআন এবং সুন্নাহর আলোকে একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনে কাজ করে যাচ্ছে। একমাত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আল্লাহর এই জমিনে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করবে ইন শা আল্লাহ। একটি আদর্শিক রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনে জামায়াতে ইসলামীর বিকল্প নেই উল্লেখ করে লাকসামের এ কর্মী সম্মেলনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ও সাবেক সাংসদ অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার জামায়াতের নেতাকর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা'ছুম বলেন- আল্লাহর আইন এবং সৎ লোকের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এদেশে একটি ইসলামী কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কাজ করছেন।
তিনি বলেন, যে কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের সম অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে, নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত হবে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে, মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে, দারিদ্র্য বিমোচন হবে, সেই দেশ অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ হবে। সেই আলোকে আগামী দিনে সুন্দর একটি বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গিকার নিয়ে কর্মপন্থা নির্ধারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম এগিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. সৈয়দ এ কে এম সরওয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী লাকসাম-মনোহরগঞ্জবাসীর জন্য সাতটি দাবী তুলে ধরে বলেন- অবিলম্বে লাকসামকে জেলা ঘোষণা করা, নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা, লাকসামে ৫'শ শয্যার একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল করা, লাকসাম থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত নতুন রেলপথ স্থাপন করা, লাকসাম চৌদ্দগ্রাম সড়ক, লাকসাম মুজাফফরগঞ্জ সড়ক, লালমাই-চাঁদপুর সড়ককে চার লেনে উন্নীত করা, লাকসাম বাইপাস এবং বাগমারা বাজারের অবশিষ্ট চার লেন সড়কের কাজ দ্রুত শেষ করা এবং অবিলম্বে কুমিল্লার বিমানবন্দরটি চালুর ব্যবস্থা করা। এ দাবীগুলো প্রধান অতিথির নিকট উপস্থাপন করলে প্রধান অতিথি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার তাঁর বক্তব্যে দাবীগুলো যৌক্তিক ও সময় উপযোগী বলে মন্তব্য করেন এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যখনই সুযোগ পাবে, তখনই দাবীগুলো পূরণ করবেন বলে জানিয়েছেন। পরে জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) সংসদীয় আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অধ্যাপক ড. সৈয়দ এ কে এম সৈয়দ সরওয়ার উদ্দিন সিদ্দিকীকে জামায়াতের দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা ও সকলের কাছে পরিচয় করিয়ে দেন।
কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য আবদুর রব, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর এডভোকেট মো.শাহজাহান, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. সৈয়দ এ কে এম সরওয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরা সদস্য মুহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি ডা. আবদুল মবিন, মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমান,লাকসাম উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির হাফেজ জহিরুল ইসলাম, কুমিল্লা জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১ এর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট মুহাম্মদ বদিউল আলম সুজন।
লাকসাম পৌরসভা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মু. জয়নাল আবেদীন পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে ও লাকসাম পৌরসভা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মু. শহিদ উল্যাহ এবং লাকসাম উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মু.জোবায়ের ফয়সালের যৌথ সঞ্চালনায় কর্মী সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন- কুমিল্লা ইবনে তাইমিয়া স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুল আলম হেলাল, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি অধ্যাপক রেজাউল করিম, জেলা জামায়াত নেতা সরওয়ার কামাল, মনোহরগঞ্জ উপজেলা জামায়াত মনোনীত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হামিদুর রহমান সোহাগ, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মিজানুর রহমান, মনোহরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমীর হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ নুরুন্নবী, নাঙ্গলকোট উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা জামাল উদ্দিন, লাকসামের গোবিন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বাশার, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মহি উদ্দিন রনি প্রমুখ। কর্মী সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা, লাকসাম উপজেলা ও লাকসাম পৌরসভা জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
লাকসাম হাইস্কুল মাঠের এ কর্মী সম্মেলন জনসমুদ্রে পরিনত হয়ে মহসমাবেশে রুপ নিয়েছে। জামায়াতের এই কর্মী সম্মেলন লাকসামের ইতিহাসে স্মরণকালের কর্মী সম্মেলন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এ সম্মেলনে প্রায় ২৫ হাজার জামায়াত-নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেছেন এবং মাঠের বাহিরে নিরবিচ্ছন্ন নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দলের চার শতাধিক কর্মী সেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেছেন।