সবকিছু বিক্রি করে দিয়েই শহরে এসেছি।
ফুটপাতের ধুলো মেখে, বাতাসের শব্দ গিলে
আমি এখন নগরের এক অনিচ্ছুক বাসিন্দা।
শহরের আলো ঝলমলে,
কিন্তু এই আলোর নিচেই দীর্ঘ ছায়া পড়ে।
চোখের সামনে গগনচুম্বী বিলবোর্ড,
যেখানে সুখের বিজ্ঞাপন ঝুলে থাকে
একটি নিখুঁত হাসির ফাঁদে।
আমি পা ফেলি, দেখি—
রাস্তার মোড়ে মোড়ে জ্যাম
আর মানুষের ব্যস্ততা জমাট বেঁধে আছে।
এখানে সময় শুধু ছুটে চলে,
পিছনে তাকানোর সুযোগ নেই।
আমি পথ হাঁটি, একা,
এ শহর আমাকে গ্রাস করে নেয়
একটি যান্ত্রিক গলাধঃকরণে।
আমি শব্দ শুনি, বুঝি না,
আমি মুখ দেখি, চিনি না,
আমি হাসি দেখি, অনুভব করি না।
শহরে আসার আগে আমার ছিল
নিঃসঙ্গ দুপুর, গাছের ছায়া,
এক কাপ চায়ের উষ্ণতা,
এক ফোঁটা বৃষ্টির শব্দ।
এখানে বৃষ্টি এলে রাস্তা কাদায় ভরে যায়,
কিন্তু মন ভেজে না,
এখানে বিকেল আসে, সন্ধ্যা নামে,
কিন্তু ক্লান্তি মুছে যায় না।
আমি দেখেছি,
আকাশ ছোঁয়া স্বপ্নের নামে
মানুষ রোবট হয়ে গেছে।
আমি দেখেছি,
গলির ধারে একটি ছেলে
তার খেলনার গাড়ি ভেঙে ফেলেছে
আর একটি মানুষ
তার ভেতরের শিশুকে হত্যা করেছে।
এই শহরে কেউ কারও জন্য অপেক্ষা করে না,
চিঠিগুলো এখন আর ডাকবাক্সে পড়ে থাকে না,
ফোনের স্ক্রিনে ভেসে আসে
শুধু রোবোটিক ভালোবাসা।
আমি একদিন ফিরে যাবো কি?
নাকি এই কংক্রিটের দেয়ালের মধ্যেই
নিজেকে হারিয়ে ফেলবো?
আমার চোখ, কান, বিবেক—
সবকিছু বিক্রি করে দিয়েই শহরে এসেছি,
শুধু ফিরে যাওয়ার পথটুকু আর খুঁজে পাই না।