রমজান হলো আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনের মাস। এই পবিত্র মাস আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ করে দেয়, যেখানে আমরা কুরআনের শিক্ষা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে পারি। বিশেষ করে, সূরা তাওবার ২৪ নাম্বার আয়াত আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেয়। এই আয়াতে আল্লাহ আমাদের আটটি বিষয় পরিহার করতে এবং তিনটি বিষয়কে আঁকড়ে ধরতে নির্দেশ দিয়েছেন, যা সত্যিকারের ঈমানদারের পথচলার মৌলিক শিক্ষা।
সূরা তাওবা ২৪: পরিহারযোগ্য আটটি বিষয়
আল্লাহ বলেন:
“বল, যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই-বোন, তোমাদের স্ত্রী-পরিবার, তোমাদের আত্মীয়স্বজন, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা তোমরা আশঙ্কা করো, এবং তোমাদের প্রিয় বাসস্থান—এই সবকিছু যদি আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং তাঁর পথে জিহাদ করার চেয়ে তোমাদের কাছে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা করো, আল্লাহ তাঁর সিদ্ধান্ত নিয়ে আসা পর্যন্ত। আল্লাহ পাপাচারীদের পথপ্রদর্শন করেন না।” (সূরা তাওবা: ২৪)
এখানে আল্লাহ এমন আটটি বস্তু উল্লেখ করেছেন, যেগুলো যদি কারও কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালোবাসার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়, তবে তারা পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হবে। সেই বিষয়গুলো হলো:
1. পিতা-মাতা
2. সন্তান-সন্ততি
3. ভাই-বোন
4. স্ত্রী ও পরিবার
5. আত্মীয়-স্বজন
6. উপার্জিত সম্পদ
7. ব্যবসা-বাণিজ্য
8. প্রিয় বাসস্থান
এই আটটি বিষয় মানবজীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এগুলো যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালোবাসা থেকে বড় হয়ে যায়, তাহলে তা আমাদের ঈমানের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
সূরা তাওবা ২৪: আঁকড়ে ধরার তিনটি বিষয়
এই আয়াত আমাদের শেখায় যে, তিনটি জিনিসকে সবকিছুর ওপরে রাখতে হবে:
1. আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা
2. রাসূল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা
3. আল্লাহর পথে জিহাদ (অর্থাৎ আত্মশুদ্ধি, ধর্ম প্রচার ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করা)
রমজান মাস আমাদের জন্য এই তিনটি বিষয়ে মনোযোগী হওয়ার সর্বোত্তম সময়। এ মাসে আমরা আমাদের দুনিয়াবি আকর্ষণ কমিয়ে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে পারি।
রমজানে এই শিক্ষার বাস্তবায়ন
রমজান আমাদের সুযোগ করে দেয় নিজেকে যাচাই করার:
1. আল্লাহকে বেশি ভালোবাসার পরীক্ষা:
আমরা কি নামাজ, রোজা ও অন্যান্য ইবাদতকে দুনিয়াবি ব্যস্ততার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি?
আমরা কি সত্যিই কুরআন বোঝার চেষ্টা করছি?
2. রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ:
আমরা কি রাসূলের চরিত্র ও আদর্শকে আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করছি?
আমরা কি তাঁর শিক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছি?
3. আল্লাহর পথে সংগ্রাম:
আমরা কি নিজেদের আত্মশুদ্ধির জন্য কাজ করছি?
গরিব-দুঃখীদের সহায়তা করছি?
সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হচ্ছি?
চিন্তা করি,,,,,
মাহে রমজান কেবল উপবাসের মাস নয়; এটি আত্মশুদ্ধি ও ঈমান দৃঢ় করার মাস। সূরা তাওবা ২৪ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, দুনিয়াবি বিষয়গুলো আমাদের ঈমানের চেয়ে বড় হতে পারে না। আমাদের উচিত এই রমজানে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালোবাসাকে সর্বোচ্চ স্থানে রাখা এবং আল্লাহর পথে আত্মশুদ্ধির জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো।
আসুন, এই রমজানকে সত্যিকারের আত্মগঠনের মাসে পরিণত করি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমাদের জীবন পরিচালিত করি।