
এই বাড়িটাতে শুধু পুড়া গন্ধটাই ছিল,
সেটাও রাখতে দিল না।
ধোঁয়ার স্মৃতি মুছে দিলো বাতাস,
ভেঙে দিলো জানালার শিক।
একদিন এখানে কান্নার শব্দ ছিল,
আজ শুধু নীরবতার শাসন।
সিঁড়িগুলো বেয়ে রক্তের নহর নেমে গেছে,
নেমেছে ধানের ক্ষেত দিয়ে, নেমেছে নদীর জলে,
নদীর জল লাল, কাদামাটিতে মিশে গেছে মানুষের ছায়া।
এই বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে আঁকা ছিল স্বপ্ন,
স্বপ্নের রঙ আজ ছাই, আজ কেবল ফাটা ইটের স্তুপ।
ঘরের কোণে পড়ে থাকা চিঠিগুলো কালো হয়ে গেছে,
কালির অক্ষর ছড়িয়ে পড়েছে বাতাসে,
বাতাস বয়ে নিয়ে গেছে না বলা শব্দ।
সিঁড়িগুলো বেয়ে নামতে নামতে
হারিয়ে গেছে পায়ের ছাপ,
ধুলোর নিচে চাপা পড়েছে ইতিহাস,
ইতিহাস মানতে চায় না কেউ,
মানতে চায় না শহরের আলো,
মানতে চায় না সকালবেলার কাক,
কাক কেবল ডাকে, তবু কিছুই জানায় না।
ধানের ক্ষেতের ফাঁকে ফাঁকে লুকিয়ে আছে চোখ,
চোখের পাতায় জমে থাকা ঘুমদূতেরা উড়ে গেছে বহুদিন, তারা আর ফেরেনি,
ফেরার ইচ্ছেও নেই তাদের।
নদীর জলে মুখ ডুবিয়ে রেখেছে শহর,
শহর জানে না,
তার শরীরেও একদিন পোড়া গন্ধ ছিল।
এই বাড়িটাতে শুধু পোড়া গন্ধটাই ছিল,
সেটাও রাখতে দিল না।
এখন এখানে শুধু শূন্যতা,
শূন্যতার মাঝেও কিছু মানুষ আসে, কিছু মানুষ যায়,
তারা দেয়ালে হাত বুলিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করে,
তারা ছাইমাখা মেঝেতে বসে কিছু খোঁজে,
তারা নদীর কাছে দাঁড়িয়ে কিছু জানতে চায়।
নদী কিছু বলে না,
নদী শুধু বহে যায়, বহে যায়, বহে যায়।