
আজকের দিনটাও শুরু হলো ঠিক আগের মতো।
কফির কাপের ধোঁয়া ভেসে উঠলো জানালার পাশে বসা শূন্যতায়।
কিন্তু আজ অদ্ভুত এক গন্ধ—
কফির নয়, পুরোনো কোনো বইয়ের পাতায় জমে থাকা দূরত্বের গন্ধ।
আমি টেবিলের ওপর হাত রাখতেই মনে হলো,
কোনো এক অদেখা আঙুলের স্পর্শ আমার দেহ জুড়ে খেলে যাচ্ছে।
কোনো কথা নেই, শুধু নীরবতার ভেতর ভাঙা এক নিঃশ্বাসের শব্দ।
স্মৃতিরা এসে বসেছে ঠিক পাশের চেয়ারে।
একটি পুরোনো ডায়েরি খুলে দেখি—
তোমাকে লেখা কিছু চিঠির খসড়া,
যা হয়তো কোনোদিন পাঠানো হয়নি।
অসঙ্গত কিছু বাক্য—
“তুমি কি জানো, বাতাসও তোমার নাম এখনো ফিসফিস করে?”
আরো লেখা—
“প্রতিবার চোখ বন্ধ করলে তোমাকে দেখি।
খোলা চোখেও।”
তোমার হাতের লেখা এখনো তাজা,
প্রতিটি অক্ষর যেন বুকের ভেতর ছড়িয়ে পড়ে রক্তের মতো।
আমি ডায়েরির পাতায় আঙুল বোলাই,
মনে হয় যেন তোমার গাল ছুঁয়ে দেখছি—
কিন্তু পাতাগুলো কাঁপে না,
শুধু আমার বুকের ভেতর কাঁপন জেগে থাকে।
বাইরে হালকা বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
জানালার কাঁচে জলের ফোঁটা গড়িয়ে পড়ছে,
ঠিক যেমন কোনো একসময় তোমার চোখের জল গড়িয়ে পড়েছিল আমার স্মৃতিতে।
আমি ফিসফিস করে বললাম—
“তুমি শোনো?”
কোনো উত্তর নেই।
শুধু নীরবতার বুক ভেদ করে
একটি শব্দ ফিরে আসে নিজের প্রতিধ্বনিতে—
“শুনছি…”
বুকের ভেতর যে কষ্ট জমে আছে,
সেটা হয়তো কোনোদিন হালকা হবে না।
কারণ ভালোবাসা কখনো হারায় না,
শুধু রূপ বদলায়—
একটি চিঠি থেকে, একটি গান, একটি নিঃশ্বাসের ফাঁকফোকরে।
রাত গভীর হলে আমি সেই ডায়েরি বন্ধ করি।
কিন্তু তোমার প্রতিটি শব্দ আমার হৃদয়ের পৃষ্ঠায় খোদাই হয়ে থাকে।
আকাশের তারা ঝরে যায়,
কিন্তু তুমি?
তুমি রয়ে যাও—
অম্লান, নিঃশব্দ,
তবুও সমস্ত শব্দের ভেতর জেগে থাকা এক নাম।