প্রিন্ট এর তারিখঃ এপ্রিল ২০, ২০২৫, ৪:৩৬ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ ফেব্রুয়ারী ৪, ২০২৫, ৩:৪০ এ.এম
কাটিয়ে দিলাম চল্লিশটি বসন্ত।
শালিকের ডানায় ভোরের রোদ এসে পড়ে জানালায়,
নিস্তব্ধ ছায়ায় ঘুমিয়ে থাকে ক্লান্ত বিকেল,
হাসনাহেনার গন্ধে ভেসে যায় হেমন্তের শেষ আয়োজন।
আমি দেখি চোখ তুলে—
পিচঢালা রাস্তায় ফেলে আসা পদচিহ্ন,
হাওয়ায় মিশে থাকা নামহীন আত্মাদের গল্প।
তবু কি এই শহর আমাকে চিনতে পেরেছে?
আমি তো রোজ নিজের ছায়া ছুঁয়ে ফিরেছি,
রেললাইনের ধারে বসে শুনেছি শব্দহীন ট্রেনের হুইসেল।
হয়তো শহর জানে না—
আমার শিরায় বহমান এক ব্যথার নদী,
যে নদী নিঃশব্দে মিশে যায় শহরের অতল নীরবতায়।
পলাশ ফুলের মতো দগদগে লাল,
তবু স্মৃতির মতো শীতল হয়ে পড়ে থাকে।
এই শহরের প্রতিটি ইটের গায়ে আঁকা আছে
আমার জীবনের কথা—
অনামিকা কষ্টের ছবি।
তবুও কি শহর আমাকে ভালোবেসেছে?
চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকেছি ভাঙা ঘাটের ধারে,
যেখানে বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিল
আমার শৈশবের শেষ কবিতার পৃষ্ঠা।
তুমি কি দেখেছো?
সন্ধ্যা নামলে বাতিগুলো কি নিঃসঙ্গ হয়ে জ্বলে?
তুলসী পাতার ঘ্রাণ মিশে যায় বাতাসে,
আমার শরীরে জমে থাকা পুরনো দিনের জ্বরের মতো
যে জ্বরে আমি পুড়েছি, নীরবে... বারবার।
স্মৃতির কুয়াশায় আজও ভেসে আসে—
ক্লান্ত দুপুরের রোদে ফুটপাতে শুয়ে থাকা ছেলেটা,
খোলা আকাশের নিচে তার চোখে জমে থাকা স্বপ্ন,
যে স্বপ্ন আমিও দেখতাম— হয়তো,
নদীর জলে ভাসা দূরের পালতোলা নৌকোয়।
চল্লিশটি বসন্ত!
এই শহর কি জানে— কতটা নিঃশব্দে কেটে গেছে?
রাতের শেষে উঠে আসে যে নতুন সকাল,
সে সকাল কি আমাকে আর ডাক পাঠায়?
তবু আমি হাঁটি,
চেনা গলির ভেতর থেকে মায়াবী আলো ছুঁয়ে—
যেন শহর আমাকে একটিবার শুধুই বলে—
"আমি তোমার।"