1. live@dailytrounkhota.com : news online : news online
  2. info@www.dailytrounkhota.com : দৈনিক তরুণ কথা :
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:১৬ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
পুটি মাছ কাটা নিয়ে বিবাদ, স্বামীর হাতে প্রাণ গেল স্ত্রীর: এলাকায় শোকের ছায়া মনোহরগঞ্জে যৌথবাহিনীর অভিযানে নারীসহ ৩ মাদক ব্যবসায়ী আটক মনোহরগঞ্জে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১টি দোকান ভূষ্মীভূত মনোহরগঞ্জে জামায়াতের প্রীতি সমাবেশ ডেটলাইনের মধ্যে সংস্কার করে নির্বাচন দেন: জামায়াতের সেক্রেটারি শতরূপা ফাউন্ডেশনের চিকিৎসা সহায়তা পেলো, মাদারীপুরের নাছিমা আক্তার। তৃণমূল থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিএনপি, কর্মীদের প্রত্যক্ষভোটে হচ্ছে কমিটি গঠন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্থার ও বিচার কার্যক্রম শেষে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবেঃ অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার শতরূপা ফাউন্ডেশনের চিকিৎসা সহায়তা পেলো,ময়মনসিংহের সিদরাতুল মুনতাহা চ্যাম্পিয়ন মির্জাপুর স্পোর্টিং ক্লাব।

গল্প -গঙ্গার ইলিশ -সুনির্মল বসু

এম.এ.মান্নান.মান্না:
  • প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৪০ বার পড়া হয়েছে
খুব ভোর রাত থেকে টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হয়েছিল।
যখন সাইকেল চালিয়ে গঙ্গার দিকে যাচ্ছি, তখন ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু আমাকে তো যেতেই হবে।
আগের দিন মল্লিক বাজারে মাছওয়ালি মাসিকে বলে রেখেছিলাম, আমার একটা বড় সাইজের ইলিশ চাই।
উনি বলেছিলেন, ভোর বেলায় নদীর পাড়ে চলে এসো।
আসলে, ঘটনাটা একটু পরিষ্কার করে বলি।
ওনার নিজস্ব দুটো নৌকা আছে। প্রতিদিন ভোরবেলা অন্ধকার থাকতে থাকতে ওনার লোকেরা নৌকো নিয়ে নদীতে মাছ ধরতে যায়।
মাছ কখন কি উঠবে, সেটা তো আগে থেকে আন্দাজ করা যায় না। তবে মাসি আমাকে আশা দিয়েছিলেন।
দুটো নৌকো ভোরবেলাতেই নদীতে গেছে। এখনো ফিরে আসেনি। আমি নদীর পাড়ে গাছ তলায় ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছি। সাইকেলটা সামনে শিব মন্দিরের পাশে দাঁড় করিয়ে রেখেছি।
খানিক বাদে দুটো নৌকো ফিরে এলো। দেখি বৃষ্টিতে ভিজে জেলেরা ঠান্ডায় কাঁপছে। চারটে বড় ইলিশ,
গোটা আটেক ছোট ইলিশ, কিছু ফেসা মাছ, আর কিছু গঙ্গার ভোলা মাছ নিয়ে ওরা ফিরেছে।
মাছওয়ালি মাসি বললেন, তুমি কি বড় ইলিশ নেবে?
বললাম, হ্যাঁ।
ওটা কিন্তু বারোশো টাকার কমে দিতে পারব না।
একটু কম করতে হবে তোমাকে, মাসী। তুমি হাজার টাকা করে নাও।
অনেক গড়িমসি করে কিলো, দেড়েকের একটি ইলিশ ওজন করে মাসি আমার থলিতে ভরে দিল।
টাকা দিয়ে সাইকেলে ইলিশ মাছ থলিতে ঝুলিয়ে আমি যেন রাজ্য জয় করে ফিরছি, এই ভাব নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম।
ঘটনাটা পাড়াময় জানাজানি হয়ে গেল।
পাড়ার দাদা স্থানীয় বিধানদা বললেন, তুই নাকি সকাল সকাল একটা ইলিশের কান ধরে এনেছিস?
তুই কি করে জানলি?
তোর থলেতে মাছের লেজটা বার হয়েছিল।
আসলে, আমি মাছের বিজ্ঞাপন দিচ্ছিলাম।
পাড়ার শ্যামলাল কাকু এসে বললেন, দ্যাশে থাকতে
গাছের ইলিশ আর পুকুরের আম এত খাইছি, যে সেই টেস এখনো মুখে লাইগ্যা আছে।
পাশের বাড়ির সুরমা বৌদি আমার গিন্নিকে বললেন, ভাঁপা না সর্ষে ইলিশ?
সুমিতা বলল, দেখি কি করা যায়!
বলেই আমার দিকে, বিরক্তি নিয়ে তাকালো।
পাড়ার মোড় থেকে তখন মালতী বৌদি চলে এসেছেন। বললেন, ভাঁপা ইলিশ আমার মা যেমন করে করতেন, আজ পর্যন্ত কাউকে ওভাবে রান্না করতে দেখিনি।কী অসম্ভব ভালো খেতে হতো।
পাশের বাড়ির পিসিমা বললেন, তোরা শুধু ইলিশের গল্প করছিস, ইলিশ মাছের তেলের কথা তো বলছিস না!
পাড়ার প্রণব বাবু ট্রেনে হকারী করেন।
বললেন,ইলিশ মাছের তেল দিয়াই তো একথালা ভাত খাইয়া ফেলন যায়!
পাড়ার মাতব্বর গগন সেন এসে বললেন, ইলিশ মাছের ডিম ভাজা তার তো কোনো তুলনা হয় না।
সকালবেলায় উঠোনে অনেক মানুষের ভীড় হয়ে গেছে।
সবই ইলিশের সৌজন্যে।
আমার গিন্নী খুবই সতর্ক মানুষ। মাছের থলিটা অনেক আগেই রান্নাঘরে নিয়ে গেছেন। সবাই যদি মাছে লোভ দেয়, তাহলে হাজার টাকার ইলিশ মাছ খাওয়া মাঠে মারা যাবে।
বেলা বাড়তে পাড়ার তরুণ তুর্কিরা এসে হাজির। সন্টে আমার গিন্নীকে ডেকে বলল, বৌদি, দুপুরে চলে আসবো নাকি?
হ্যাঁ, আসতে পারো।
হাত কাটা শ্যামল বলল, আমাদের পুকুরে ইলিশ মাছের চাষ করবো ভেবেছিলাম, বাপের কাছে টাকা চাইলাম, ফুটিয়ে দিল। একটা বিজনেস করবো ভাবলাম, বাপ শালা মাল ডাউন করতেই চায় না।
রঞ্জন বলল, ইলিশ মাছ হল মিষ্টি জলের মাছ। তুই পুকুরে ইলিশ চাষ করবি ভেবেছিস? তোর শালা তার কেটে গেছে।
ভিড়ের মধ্যে নেপলা বলে উঠলো, তার কাটে নি, ফিউজ উড়ে গেছে।
শ্যামল বলল, সরি গুরু। মিসটেক হয়ে গেছে। তুমি শালা কত জানো, আমাকে একটু লেগ ডাষ্ট দাও মাইরি!
ইতিমধ্যে সৌজন্য সরকার এসে পড়েছেন। উনি কবিতা লেখেন। আমাকে বললেন, ইলিশ মাছ নিয়ে উপন্যাস লিখেছিলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়।
বললাম, পদ্মা নদীর মাঝি। জানি তো!
তারপর?
আমি মাথা চুলকে ভাবছিলাম।
সৌজন্য সরকার বললেন, ইলশে মারির চর। আব্দুল জব্বারের লেখা। এইতো আমাদের বজবজে
নোদাখালীতে বাড়ি।
আমি বললাম, আমার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল, ট্রেনে। ভদ্রলোক খুব পান খেতেন।
বেলা বাড়ছিল। উঠোন থেকে ভিড় কমতে লাগলো। এক সময় চেয়ে দেখি, উঠোন একেবারে ফাঁকা।
বাঁচা গেল!
দুপুরে সুমিতা ঘামে ভিজে হলুদ মাখা শাড়িতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো। বলল, তাড়াতাড়ি স্নান করে এসো। তোমাকে খেতে দেবো।
বললাম, রান্না কমপ্লিট?
হ্যাঁ তো।
স্নান করে দুপুরবেলা খেতে বসেছি। সুমিতা দেখি, মাছের ডিম ভেজেছে। ছোট্ট একটা বাটিতে কাঁচা লঙ্কা সহ মাছের তেল রেখেছে। আমার মনটা প্রসন্ন হয়ে গেল।
আমি খুশি মনে খেয়ে চলেছি।
সুমিতা বলল, ইলিশ মাছ নিয়ে সেই ভোর থেকে যা সব কান্ড বাঁধিয়ে বসে আছো!
আমি হেসে বললাম, গঙ্গার ইলিশ বলে কথা!
আমার মুখের দিকে চেয়ে সুমিতা নিজেও হেসে ফেলল।
মুখে বলল, ইলিশ মাছ নিয়ে এত মাতামাতি। তোমরা কি ঘটি, না বাঙাল?
আমি বললাম, ইলিশ মাছ সবারই প্রিয়। বাঙ্গাল ঘটি বলে কোন কথা নেই।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট