এক লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে রাজধানীর শাহবাগে লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশের চেষ্টা করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার অভিযোগ উঠেছে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে।
প্রলোভনে পড়া লোকজন বলছেন, ‘অহিংস গণ–অভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। শাহবাগে যারা উপস্থিত হবেন, তাদের বিনা সুদে এক লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) দিবাগত রাত ২টা থেকেই পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সমাবেশে যোগ দিতে সারাদেশ থেকে বাস, পিক-আপ ও মাইক্রোবাসে করে দলে দলে মানুষ ভিড়তে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়।
বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও পুলিশের নজরে আসায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পুলিশ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাত থেকেই এসকল মানুষকে ফেরত পাঠাতে শুরু করে। সকাল ৮টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে এসব যানবাহন ও লোকজন অপসারণ করা হয়।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য ও পুলিশের বরাতে জানা যায়, অহিংস গণঅভ্যুত্থান নামের একটি সংগঠন সারাদেশের খেটে খাওয়া গরিব মানুষগুলোকে টার্গেট করে বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত এনে সেগুলো বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। এর বিনিময়ে রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ জনপ্রতি এক হাজার করে টাকাও হাতিয়ে নেয় তারা।
ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা যায়, অধিকাংশ লোকজনেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসেছেন। তাদের বেশিরভাগই জানেন না এখানে কী হবে। শুধু জানেন শাহবাগে আসলে ঋণ পাওয়া যাবে।
লোক ফেরাতে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আজিজুল হক বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা আর পুলিশ প্রশাসন কী করে? আমরা শুনেছি, ঢাকা শহরে গতরাত থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ৮০০ বাস প্রবেশ করেছে। শাহবাগে আন্দোলন করার জন্য বাস ভর্তি লোক নিয়ে আসা হচ্ছে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের টিএসসি থেকেই প্রায় শতাধিক গাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছি।
পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ আল মামুন গণমাধ্যমকে জানান, অহিংস গণঅভ্যুত্থান নামের সংগঠনটি আমাদের কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১০ লাখ লোকের সমাবেশ করার জন্য অনুমতিও চেয়েছিল। আমরা তাদের অতীত ঘেঁটে দেখলাম অতীতেও এদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। এরা এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে সাধারণ লোকদের থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গাইবান্ধা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ সারাদেশ থেকে তারা লোকজন নিয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, আমরা রাত ১২টার পর থেকেই বাসের মানুষগুলো প্রতারণার শিকার হয়েছে এটি বুঝিয়ে ফেরত পাঠাচ্ছি। কিন্তু একের পর এক বাস আসছেই। আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকও করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা জেনেছি অহিংস গণ অভ্যুত্থান বাংলাদেশ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গ্রামগঞ্জের দরিদ্র মানুষকে ঋণ দেওয়ার নাম করে শাহবাগে জড়ো করতে চেয়েছিল। রাত ২টা থেকেই তারা অনেকগুলো বাস নিয়ে দ্রুত গতিতে ক্যাম্পাসে ভিড় করতে শুরু করে। হঠাৎ করে আসায় তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। আমাদের শিক্ষার্থীরা,প্রশাসন ও পুলিশ একযোগে কাজ করে তাদের ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছি। মূল হোতাদের পুলিশ আটক করেছে। আমরা ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও বেশি সতর্ক থাকবো।