বিএফইউজের সদ্যপ্রয়াত সভাপতি রুহুল আমিন গাজী স্মরণে আজ শনিবার বিকাল ৩টায় সিলেট প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক নাগরিক শোকসভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।
সিলেট মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (এসএমইউজে) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সিনিয়র সাংবাদিক এনামুল হক জুবেরের সভাপতিত্বে ও এসএমইউজের সাধারণ সম্পাদক খালেদ আহমদের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. আলিমুল ইসলাম, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মো. ফখরুল ইসলাম, ইবনে সিনা হাসপাতাল সিলেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মাওলানা হাবিবুর রহমান ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ডা. শামীমুর রহমান।
স্বাগত বক্তব্য দেন এসএমইউজের সভাপতি মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা বদর। দোয়া পরিচালনা করেন মাওলানা শাহ মো. নজরুল ইসলাম। এ ছাড়া নাগরিক শোকসভায় সিলেটের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ, শিক্ষক নেতা এবং সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন।
কাদের গণি চৌধুরী বলেন, ‘সংবাদপত্রকে বলা হয় চলমান ইতিহাস। সংবাদপত্রের সাহায্যে চলমান পৃথিবীর বিচিত্র ঘটনার সাথে আমরা সহজে পরিচিত হতে পারি। তাই চলন্ত ইতিহাসের শিক্ষা নিয়ে আমাদের প্রস্তুত হতে হবে সুন্দর আগামীর জন্য।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বায়ন ও অবাধ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই গণমাধ্যমের কোনো না কোনো ভূমিকা রয়েছে। মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে প্রযুক্তি এবং সাহিত্য-সংস্কৃতির বিভিন্ন বিকাশ মিডিয়ার মাধ্যম হয়েছে। জনগণকে সচেতন করার দায়িত্ব মিডিয়ার। জনগণের বাক-স্বাধীনতা বিকাশে মিডিয়ার ভূমিকা অপরিসীম। মিডিয়া সরকারসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সমালোচনা করে তাদের আরো সংশোধনের সুযোগ তৈরি করে দেয়। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব বিকাশে গণমাধ্যমকে আরো শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে গণমাধ্যমই পারে নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে। রাষ্ট্রের সবগুলো প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ বা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলেও মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে যে প্রদীপ শিখাটি জ্বলতে থাকে, তা হলো গণমাধ্যম।’
সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, ‘সংবাদপত্র হলো একটা দেশ, সমাজ ও জাতির মুখপাত্র। একটা দেশের জাতি কতটা বাকস্বাধীনতা ভোগ করে তা গণমাধ্যমকে দেখলেই বোঝা যায়। এর জন্য একজন স্বাধীন ও মুক্তমনা সাংবাদিককে তথ্যের জন্য কঠিন ও কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। দুরন্ত ও সাহসী হতে হয়। অনেক সময় ভয়ের কারণে সত্য নিউজ করতে চায় না। অন্যায় নিপীড়ন দুর্নীতি দেখেও চুপ থাকে। পরিবারের কথা ভেবে অনেকে চুপসে যায়। ফলে সত্য থেকে যায় আড়ালে। প্রকৃতপক্ষে একজন সৎ ও সাহসী সাংবাদিক কখনো সত্যকে আড়াল করতে পারে না। তারা কখনো লোকভয় ও রাজভয় করে না। সব সময় তারা অনুসন্ধানী হয়। দেশ-বিদেশে এমন অনেক সাংবাদিক রয়েছে, যারা সত্য চাপিয়ে যেমন আলোড়ন তৈরি করেছিলেন, তেমনি জীবনও দিতে হয়েছিল। বব অ্যাডওয়ার্ড, সেন্ড লুইস পেস্ট ডিসপ্যাচ, উইল ফ্রেড ব্রুচেট, পিটার আর্নেস্ট, জন পিটার, এলিজা প্যারিস লডজয়, মার্গারেট ব্রুক হোয়াইটসহ প্রমুখ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকর্মীরা বিখ্যাত হয়ে আছেন সত্য, প্রকাশের জন্য। বাংলাদেশেও অনেক দুরন্ত সাহসী সাংবাদিক ছিলেন, যারা ৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধেও ভূমিকা রেখেছিলেন। তাদের মধ্যে জহুর হোসেন চৌধুরী, মাওলানা মুহাম্মদ আকরাম খাঁ, আব্দুস সালাম, আবু জাফর, রিয়াজুদ্দিন আহমদ, গিয়াস কামাল চৌধুরীসহ প্রমুখ প্রবীণ ও নবীন গণমাধ্যমের সাহসিকতা হিসেবে অমর হয়ে আছেন। মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমান, রুহুল আমিন গাজী জেল, হামলা-মামলার স্বীকার হয়েছেন, তবুও তারা পিছপা হননি।’
কাদের গণি চৌধুরী বলেন, ‘সাংবাদিকতা অত্যন্ত কঠিন পেশা। রক্তচক্ষু উপেক্ষার সাহস না থাকলে সাংবাদিকতা নয়। সত্যিকথা বলতে কী চারপাশে কেবল দাসত্ব আর তোষামোদি দেখে দেখে আমরা নির্বিকার হয়ে পড়েছি। সাংবাদিকতায় আমরা যাদের পরম্পরা বহন করছি, সেই গৌরবের ইতিহাস আমাদের সামান্যই প্রভাবিত করছে। আমরা এখন সাংবাদিকতার মহান ব্রতকে বিসর্জন দিয়ে অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার মানসে।’
তিনি বলেন, ‘সমকালীন সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার অন্দরে প্রবেশ করে যদি আমরা আমাদের গৌরবোজ্জ্বল অতীতকে স্মরণ করি তবে লজ্জায় নত হতে হয়। সাংবাদিকতার মানস-মূল্যবোধ আজ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে! একটি স্বাধীন দেশে সাংবাদিকতা করতে গিয়ে আমরা স্বাধীনতার জন্য রীতিমতো ‘কান্নাকাটি’ করছি। অথচ সত্য উচ্চারণে চিরকালই বাধা আসবে, গ্লানি থাকবে- তবু সত্যকে আলিঙ্গন করতে হবে- সাংবাদিকতায় এটিই বাস্তবতা। সেখানে সত্য উচ্চারণের পথ এতটা নিষ্কণ্টক হবে তা আমরা আশা করি কী করে? অতীত যেন আমাদের ভৎর্সনা করে বলছে, ‘বাধাকে, রক্তচক্ষুকে ডিঙিয়ে যাওয়ার সাহস যদি না-ই থাকবে তবে এ পথ তোমার নয়’। আত্মসমালোচনা করলে বলতেই হবে, বহুলাংশেই আপস করছি আমরা। সত্য উচ্চারণে কিছু কণ্ঠস্বর কখনো জ্বলে উঠে আবার স্থিমিত হয়ে যাচ্ছে কিংবা থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু জ্বলে উঠা এই কণ্ঠস্বরগুলো যদি সংঘবদ্ধ করা যায় তবে অচলায়তন ভেঙে দেওয়া অসম্ভব নয়। কিন্তু আমরা শুধু রাজনৈতিক কারণে করি না। মাহমুদুর রহমানের উপর যখন হামলা হলো সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়ালে অন্যরাও রেহাই পেতেন। মনে রাখবেন সাংবাদিকরাই কেবল সাংবাদিকদের রক্ষা করতে পারে। অন্য কেউ নয়। এজন্য প্রয়োজন ঐক্য। আসুন আমরা সেই অভিপ্রায়কে বাস্তব করতে উদ্যত হই।’