তখনো আকাশে নক্ষত্রেরা ছিল অগোচরে,
মেঘেদের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম,
ঝড়ের বাতাসে ভেসেছিল মন,
মৃত্তিকার গন্ধে মিশে ছিল জীবনের প্রথম অধ্যায়।
তুমি জানো, সে দিনগুলো খুব দূরে সরে গেছে—
তবু কখনো রাত্রির ছায়ায় ফুটে ওঠে তাদের স্মৃতি।
রোদ্দুরের তাপে পোড়া পথ—
তার ফাটলে জমেছে মানুষের ঘামে ভেজা কথারা।
চেনা শহরের গলিপথে নিঃশব্দে চলে যাওয়ার মতো,
অজানা পথে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।
কোথাও একদিন হয়তো এই পথ আমাকে টেনে নেবে,
যেখানে ঝরা পাতা ঝরে পড়ে নীরব বেলাভূমিতে,
মাঝে মাঝে মনে হয়, পৃথিবীটা বদলে গেছে—
অথচ শূন্যতার শব্দ আজও শুনি আমার হৃদয়ের গভীরে।
শহরের ধুলো, বৃষ্টির ফোঁটা—
সব মিলে গড়ে ওঠে এক অপরূপ শব্দমালা।
মানুষদের হাঁটার শব্দে বেজে ওঠে জীবনের মর্ম কথা—
কিন্তু আমি খুঁজে ফিরি সেই নির্জনতা,
যেখানে নদী বয়ে চলে ধীরে ধীরে,
যেখানে শরতের রোদ্দুর পড়ে নিস্তব্ধ মাঠে।
জীবন যেন এক ক্লান্ত নদী—
সে নদী কখনো থামে না, চলে যায় দূর থেকে দূরে।
পথের মোড়ে দেখা হয়, আবার হারিয়ে যায় মুহূর্তেই।
আমরা এই পৃথিবীতে বেঁচে আছি—
তবু প্রতিদিন নতুন করে মরে যাই একটু একটু করে।
হয়তো একদিন এই নদীর পাড়ে বসে থাকব,
নীরবে শুনব পৃথিবীর শেষ গান।
কখনো মনে হয়, এই জীবনটাই স্বপ্ন—
যেখানে মেঘেরা ভেসে বেড়ায় অচেনা নীল আকাশে।
সেই আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে রবে হয়তো—
তোমাকে খুঁজছি প্রতিটি বাতাসের ছোঁয়ায়।
কোনো এক গোধূলি বেলায়,
যখন আলো আর আঁধার মিশে যাবে,
তখন দেখব— পৃথিবীর রঙে মিশে গেছে সব স্মৃতি।
তুমি থাকবে না, থাকবে শুধু এই অচেনা আকাশ,
এবং একলা এক পৃথিবী,
যেখানে বয়ে যাবে অন্তহীন যাত্রার শব্দ।
তুমি কি জানো, সেই যাত্রা কখনো থামবে না?
তবু আমি থামি— অপেক্ষায় থাকি তোমার ফিরে আসার।
হয়তো একদিন ফিরে আসবে তুমি—
আমার কাছে, এই মাটির পৃথিবীতে।
কিন্তু সে দিনটা কি আসবে? দ্বিধা দ্বন্দ্বে কাটে দিন,
তোমার স্পর্শে ধূসর আকাশ হয়তো হয়ে উঠবে নীল।
তোমার চোখে দেখব পৃথিবীর এক নতুন সকাল—
আর আমি আবার জীবনের পথে হাঁটব,
অন্ধকার থেকে আলোয়—
নীরবতা থেকে জীবনের মধুর স্বপ্নে বিভোর হয়ে,
তখন হয়তো এই পৃথিবী আর অচেনা থাকবে না—
তুমি এসে মুছে দেবে সব ধোঁয়াশা,
সব অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটবে তোমার একটুখানি উপস্থিতিতে।