মিতা – ৫৪ বছর ২মাস তের দিন পর।
সৈকত – আঁতকে ওঠে, এই কি বল তুমি এ-ই সব!
মিতা – এটাই সত্য, আমার বিশ্বাস ছিলো, মরে যাওয়ার আগে আমাদের একবার দেখা হবে।
এর মধ্যে কতবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি কিন্তু আমার মনে হতো, যত কিছুই হোক, আমি বেঁচে যাবো! মৃত্যুর পরে কী পাব সেটা সৃষ্টিকর্তা জানেন কিন্তু মৃত্যুর আগে একবার দেখা হবে এটা থেকে তিনি বঞ্চিত করবেন না।
সৈকত – তোমার এ চাওয়াটা খুব জোরালো ছিলো তাই তিনি পূর্ণ করেছেন।
মিতা- নিঃশব্দে তাকিয়ে আছে সীমাহীন শরতের নীলাকাশ পানে।
সৈকত – আমাদের পরিচয় কিভাবে হয়েছিলো তোমার মনে আছে?
মিতা – খুব আছে, আমরা কয়েকজন মিলে বিমল স্যারের কাছে হায়ার ম্যাথ পড়তাম। ছেলে এবং মেয়ে একসাথেই একটা বড় গোল টেবিলে বসতাম। বিমল স্যার বসতেন না। ঘুরে ঘুরে সবার অংক করা দেখতেন।
এই দেখাতেই স্যার বুঝে নিতেন কার কি সমস্যা! সেটা স্যার এতো চমৎকার সহজ সরল ভাবে বুঝিয়ে দিতেন, আমার মনে হতো, ম্যাথ হলো পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ বিষয়!
সৈকত – হুম
মিতা- একদিন হঠাৎ দেবলোক থেকে এক সৌমকান্তি দেবতা তার পুত্রকে নিয়ে হাজির বিমল স্যারের ক্লাসে! এসে পরিচয় দিলেন, আমি আপনাদের শহরে নতুন এসেছি। নতুন ডিস্ট্রিক্ট জাজ! বিমল স্যার দেবতাকে যথাযথ সম্মান জানিয়ে হাত মিলালেন।
দেবতা বললেন, আমার একমাত্র ছেলে, সাইন্স নিয়ে পড়ছে। ছাত্র মোটামুটি ভালো। আমি এখানে এসে আমার লোকদের ভালো অংকের শিক্ষকের সন্ধান দিতে বললাম। সবাই আপনার কথা বললো, তাই নিয়ে এলাম মহাশয়, আপনি মেহেরবানী করে আমার ছেলেটাকে পড়াতে অসম্মতি জানাবেন না। সৈকত আপনার কথা মান্য করে চলবে। বিমল স্যার মৃদু হেসে বললেন, আপনি দেখি সব খবর নিয়ে এসেছেন। আমরা সবাই বিদ্যুৎ চমকের মত এক ঝলক দেখে নিলাম। মনেমনে ভাবলাম, বাপরে মানুষ এতো সুন্দর হয় কেমন করে? এতো বৌদ্ধর ছেলে কোনাল!
তারপর এক জীবন থেকে অন্য জীবনে,
আমাদের মাঝে একটা প্রাচীর গজালো,
ভীষণ সে প্রাচীর,অভিমানের পাথরে গড়া
সে প্রাচীরটার ব্রেকাপ হলো না।
সৈকত – আমাকে সেদিন ক্ষমা করতেই পারতে।
মিতা – এ প্রসঙ্গ থাক। পৃথিবীর কোনো কিছুই কোনো কিছুর মতো হুবহু এক রকম
নেই।
এটাই সৃষ্টিকর্তার মৌলিকত্ত। আমাকে আমার বিশ্বাস এবং সস্কারের সাথে কম্প্রোমাইস না করার এ মন তিনি দিয়েছেন!
আজ তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।
এ কথা বলে মিতা উঠে দাঁড়ালো,
বলল, চলো সন্ধ্যা হয়ে এলো
তোমাকে এক কাপ মটকা চা খাওয়াবো।