সূত্র আরও বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ফয়সল, খন্দকার এবং এফএমইউ নামের তিনজন ব্যক্তি নগদ (এমএফএস) সার্ভিসে নিয়মিত অর্থ পাঠাতেন তারেকের কাছে। পরবর্তীতে তিনি তা তার সহযোগীদের কাছে পৌঁছে দিতেন। নাশকতামূলক কর্মকান্ড নিজের মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে রাখতে বলতেন। আহত ব্যক্তিদের কম খরচে চিকিৎসার জন্য রাজধানীর একটি নামকরা হাসপাতালে বলে রাখা হয়েছিল। আর এর সমন্বয় করতেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী খন্দকার নামের একজন চিকিৎসক। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র বলছে, বিএনপিপন্থি অন্তত ৩০ জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে নাশকতাকান্ড বাস্তবায়নের জন্য। গ্রেফতারকৃতরা ইতোমধ্যে ওই ব্যবসায়ীদের নাম ফাঁস করে দিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে। তবে উত্তোলিত টাকার প্রায় অর্ধেকই উত্তোলনকারীরা নিজেদের কাছে রেখে দিতেন। অর্ধেক টাকা পৌঁছত নাশকতাকারীদের কাছে। আবার অনেক সময় পুরোটাই তারা নিজেরা মেরে দিয়েছেন। বর্তমানে রিমান্ডে থাকা অর্থদাতা, সমন্বয়ক এবং বাস্তবায়নকারীদের মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমরা পেয়েছি। সাইফুল ইসলাম নীরব, টুকু, মজনুসহ আরও কিছু সাবেক ছাত্রনেতা বিএনপিপন্থি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ নিতেন। অর্থদাতাদের অনেক বিএনপির শীর্ষ নেতা এবং ব্যবসায়ী। লন্ডনে থাকা তারেক রহমান ওই ব্যক্তিদের নাম বলে দিতেন। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, নাশকতার বাস্তবায়ন সংক্রান্তে আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। কীভাবে অর্থ নাশকতাকারীদের কাছে পৌঁছেছে সেই রুট সম্পর্কেও তথ্য পাওয়া গেছে। এগুলো এখন যাচাই-বাছাই চলছে। তবে যারা নাশকতার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে হামলা ও অগ্নিসংযোগে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয় রাজধানী ঢাকা। সহিংসতায় বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় চালানো হয় হামলা। মেট্রো স্টেশনে হামলায় বন্ধ হয়ে গেছে মেট্রোরেল চলাচল। সেতু ভবন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অগ্নিসংযোগে পুড়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। এ ছাড়া ডেটা সেন্টারে অগ্নিসংযোগের ফলে ইন্টারনেট সেবা ও রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে হামলায় সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। দুর্বৃত্তদের হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় মেট্রোরেলের দুই স্টেশন। টিকিট ভেন্ডিং মেশিন (টিভিএম), মনিটরসহ বিভিন্ন নির্দেশক বক্স ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে অকেজো হয়ে পড়েছে টিভিএম মেশিন। এ ছাড়া যাত্রীসেবা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত কম্পিউটার চুরি করে নিয়ে যায় হামলাকরীরা। হামলার ফলে এই স্টেশন দুটি যাত্রীসেবার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতির হিসাব এখনো জানা যায়নি। তবে এই দুটি স্টেশন পুনরায় চালু করতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে। দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে ভস্মিভূত হয়েছে পুরো সেতু ভবন। অগ্নিকান্ডে পুড়ে গেছে অন্তত ৫৫টি গাড়ি। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। তবে সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনো জানা যায়নি। এই ঘটনার তদন্তে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সেতু মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ফলে অধিদপ্তরটির গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে গেছে। রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে অগ্নিকান্ডে পুড়ে ছাই হয়েছে মোটরসাইকেল, গাড়িসহ প্রডাকশন সেট। পুড়ে যায় ২০-২৫টি গাড়ি। ডেটা সেন্টারে আগ্নিসংযোগের ফলে ইন্টারনেট সেবা থেকে বিচ্ছিন্ন সারা দেশ। মিরপুরের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ভবনে অগ্নিকান্ডে ঢাকা বিভাগীয় পরিচালকের গাড়ি, কার্যালয় ও একটি বাস পুড়ে যায়। এ ছাড়াও চলমান আন্দোলনে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মহাখালী টোল প্লাজা, মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়াম, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর বনশ্রী কার্যালয়, ধানমন্ডির ওষুধ প্রশাসন ভবনে অগ্নিসংযোগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সূত্র মতে, হামলাকারীদের টার্গেটে ছিল পুলিশ ও সাংবাদিক। হামলাকারীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢুকে যায়। এরপর সরকার পতনের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে টার্গেট করে হামলা চালাতে থাকে। আর এসব হামলা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটানোর জন্যে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়। আর এই অর্থগুলো আসে বিভিন্ন দেশ ও ব্যক্তির কাছ থেকে।