1. live@dailytrounkhota.com : news online : news online
  2. info@www.dailytrounkhota.com : দৈনিক তরুণ কথা :
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
পুটি মাছ কাটা নিয়ে বিবাদ, স্বামীর হাতে প্রাণ গেল স্ত্রীর: এলাকায় শোকের ছায়া মনোহরগঞ্জে যৌথবাহিনীর অভিযানে নারীসহ ৩ মাদক ব্যবসায়ী আটক মনোহরগঞ্জে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১টি দোকান ভূষ্মীভূত মনোহরগঞ্জে জামায়াতের প্রীতি সমাবেশ ডেটলাইনের মধ্যে সংস্কার করে নির্বাচন দেন: জামায়াতের সেক্রেটারি শতরূপা ফাউন্ডেশনের চিকিৎসা সহায়তা পেলো, মাদারীপুরের নাছিমা আক্তার। তৃণমূল থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিএনপি, কর্মীদের প্রত্যক্ষভোটে হচ্ছে কমিটি গঠন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্থার ও বিচার কার্যক্রম শেষে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবেঃ অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার শতরূপা ফাউন্ডেশনের চিকিৎসা সহায়তা পেলো,ময়মনসিংহের সিদরাতুল মুনতাহা চ্যাম্পিয়ন মির্জাপুর স্পোর্টিং ক্লাব।

আজ ওদের মন ভালো নেই–নৌশিন আহমেদ রোদেলা

অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত: শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৪
  • ১৮২ বার পড়া হয়েছে
১৪.
টিন আর প্লাস্টিকের ছাপর দেওয়া ফলের দোকানের নিচে দাঁড়িয়ে আছে মিথি। আকাশ ভাঙা ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছে তার সফেদ শার্ট। গলায় ঝুলানো স্কার্ফটা গায়ে জড়িয়ে কোনোরকম গা ঢাকার চেষ্টা চালিয়েছে। চেষ্টা খুব একটা সফল হয়েছে বলে মনে হয় না। দোকানের মধ্যবয়স্ক লোকটি বারবার আড়চোখে মিথির গায়ের দিকে তাকাচ্ছে। কিছুক্ষণ হলো দোকানের সামনে একটা অ্যাম্বাসেডর এসে দাঁড়িয়েছে। গাড়ির মালিকের রুচি ভালো। ঝুম বৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে গাড়ির ভেতরে মিহি সুরে বাজছে রবীন্দ্রনাথের গান। মিতা হক ভীষণ দরদ দিয়ে গাইছেন,
‘ বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল
করেছ দান
আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান।।’
মিথি গাড়িটির দিকে তাকিয়ে রইল। স্কাই ব্লু শার্ট পরিহিত এক সুদর্শন যুবক গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে ফলের দোকানদারকে হাসিমুখে জিজ্ঞাসা করল,
‘ কদম ফুল কোথায় পাওয়া যাবে বলতে পারেন?’
ভদ্রলোকের বোধহয় নতুন বিয়ে হয়েছে। গাড়ির ভেতরে খুব সম্ভবত তার রূপবতী স্ত্রী বসে আছে। স্ত্রীর আবদার, কদমফুল। ভদ্রলোক বৃষ্টিতে ভিজে খুব আনন্দ নিয়ে নববধূর আবদার পূরণ করার চেষ্টা করছে। চমৎকার দৃশ্য! মিথিকে আগে এসব দৃশ্য খুব একটা আলোড়িত করতো না। আজ বুকের ভেতরটা অদ্ভুত এক আনন্দে ভরে গেল। ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাব্বিরের দিকে। বৃষ্টির জলে ঝাপসা হয়ে গিয়েছে তার চশমার কাচ। ঝাপসা চশমা নিয়ে সে বিরক্ত কিনা বুঝা যাচ্ছে না। মিথিকে তাকাতে দেখে বলল,
‘ চলুন কোনো রেস্টুরেন্টে বসি। এই বৃষ্টি এতো সহজে থামবে বলে মনে হচ্ছে না৷’
মিথি মুখ গম্ভীর করে বলল,
‘ এই ভেজা শরীর নিয়ে কোনো রেস্টুরেন্টে বসব না।’
সাব্বির একবার আড়চোখে দোকানির দিকে তাকাল। বিব্রত কণ্ঠে বলল,
‘ তাহলে চলুন সামনের চায়ের স্টলে গিয়ে বসি? আপনি এখানে দাঁড়িয়ে থাকুন তা আমি চাইছি না।’
মিথি একবার সাব্বিরের দিকে তাকাল। ঝাপসা চশমার আড়ালে তার চোখদুটো ভালো করে চোখে পড়ছে না। কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে বলল,
‘ চলুন। চা খাওয়া যাক।’
সাব্বির স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ফলের দোকান থেকে বেরিয়ে মাথার উপর বামহাতের ছাউনি ফেলে আনমনেই মিথির হাত ধরে চায়ের দোকানের দিকে দৌঁড়াল। তৎক্ষনাৎ মাসখানেক আগে বিয়েতে বাজতে থাকা সেই গানের লাইনগুলো মনে পড়ে গেল মিথির-
‘লিলা বালি লিলা বালি
বর ও যুবতী সইগো
বর ও যুবতী সইগো
কি দিয়া সাজাইমু তরে?’
ফল আর চায়ের দোকানের ব্যবধান রাস্তার এপাশ-ওপাশ। সাব্বির মিথিকে নিয়ে খুব সাবধানে রাস্তা পার হলো। পঁচিশ বছরের দীর্ঘ জীবনে মিথির কখনও কারো প্রতি নির্ভরশীল হওয়ার ইতিহাস নেই। কিন্তু আজ কেউ জোর করে অথবা আনমনেই সে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়ায় হঠাৎ করেই অদ্ভুত এক আনন্দে টইটম্বুর হয়ে উঠল হৃদয়। মাথার ভেতর বাজতে লাগল রবি ঠাকুরের সেই গান,
‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল
করেছ দান
আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান।।’
মিথির মনে হলো, আজ সারাদিন বৃষ্টি হোক। বৃষ্টির জলে পৃথিবী ভেসে যাক। আজ হোক বৃষ্টি ঝরার দিন। সাব্বির চায়ের দোকানে এসে মিথির হাত ছেড়ে দিল। কিছুক্ষণ পর দু’কাপ গরম চা এনে মিথির পাশে দাঁড়াল। মিথিকে একটা কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘ তারপর কী পরিকল্পনা?’
মিথি একদৃষ্টিতে বৃষ্টি দেখতে দেখতে চায়ের কাপে চুমুক দিল। বলল,
‘ এইতো, বৃষ্টিটা একটু কমলে বাস ধরে বাড়ি ফিরে যাব।’
‘ বাড়ি বলতে ময়মনসিংহ?’
‘ না। মিরপুর-১০। আমার বড় খালামণির বাড়ি।’
‘ সে তো বেশ দূর। ভেজা কাপড়ে, এই অবস্থায় বাসে করে এতদূর যাওয়া তো মুশকিল হবে। সন্ধ্যাও হয়ে আসছে। বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমার সম্ভবনাও প্রবল।’
মিথি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
‘ এ তো রোজকার ঘটনা। কী আর করা যাবে বলুন?’
সাব্বির একটু ভেবে ইতস্তত করে বলল,
‘ আপনি চাইলে আমার বাসায় যেতে পারেন।’
মিথি জবাব না দিয়ে সাব্বিরের দিকে তাকাল। সাব্বির বিব্রত কণ্ঠে বলল,
‘এখান থেকে আমার বাসা বেশিদূর না। বৃষ্টি কমলে আমি নাহয় আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসব আপনার বড় খালার বাসায়?’
মিথি কোনো জবাব না দেওয়ায় পুনরায় কথা বলল সাব্বির। নিচু কণ্ঠে বলল,
‘ আসলে আপনার পোশাকটা বদলানো দরকার। এভাবে বাস ধরে অতদূর যাওয়া নিরাপদ হবে না। আপনি বিশ্বাস রাখতে পারেন আমার ওপর। আমি খারাপ লোক নই।’
মিথি হাই তুলে হালকা চালে বলল,
‘ খারাপ লোক হলেই বা কী? বর আপনি আমার। দরজায় ছিটকানি লাগানো ছাড়া কী’ই-বা করতে পারবেন আমার সাথে? পুরুষ মানুষ মাত্রই ছুকছুক স্বভাব। তবে তা পরনারীর দিকে। বউয়ের প্রতি তাদের আকর্ষণ বরাবরই কম। বিয়ের রাতেই তো কিছু করতে পারেননি।’
মিথির এমন কথায় হকচকিয়ে গেল সাব্বির। খুবই অপমানজনক কথা। সাব্বির থমধরা কণ্ঠে বলল,
‘ সেদিন আমার প্রচণ্ড মাথাব্যথা ছিল।’
মিথি হাসি চেপে সরু চোখে তাকাল। তীর্যক কণ্ঠে শুধাল,
‘ আজকে পারবেন বলছেন?’
মিথির এমন সরাসরি আক্রমনে হালকা কেশে মুখ ঘুরিয়ে নিলো সাব্বির। এই মেয়েটার লজ্জা বোধহয় কিঞ্চিৎ কম। বারবার যে প্রসঙ্গের দিকে ইঙ্গিত করে সে প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলে স্বাভাবিক কোনো রমণীর লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়ার কথা। অথচ মিথি স্বাভাবিক। তার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে, এগুলো তার জন্য দুধভাত৷ সে আরও নির্মম ও নির্লজ্জ কথা বলতে পারে। সাব্বির মৃদু গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
‘ আমি তবে রিকশা ডাকি?’
মিথি কিছু বলল না। সাব্বির বৃষ্টিতে ভিজে, চশমা ঝাপসা করে মিথিকে নিয়ে যখন রিকশায় উঠল তখন তাদের একবারও মনে হলো না বা তারা মনে করতে চাইল না — মীরপুর যাওয়া মানেই এখন আর বাস নয় এবং সাব্বিরের চির রমণী বিহীন বাসায় তার বউয়ের জন্য কেউ শুকনো কাপড় নিয়ে বসে নেই।
__________
তিন ব্যাডরুমের অ্যাপার্টমেন্টে একটা ঘর নিয়ে একলা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে মৌনি। মৌনি অলস, অগোছালো হলেও তার ঘরে কোনো এলোমেলো ভাব নেই। চারদিক গোছানো, তকতকে পরিষ্কার। ঘরের দুটো দেওয়ালে ছাদ ছুঁই ছুঁই দুটো বইয়ের তাক। তাতে ঠেসে রাখা নানান বই। বইয়ের তাকের সামনেই ফ্লোরিং বিছানা। পাশে চমৎকার একটা থ্রী শেড ল্যাম্প। অন্যপাশের দেওয়ালে বিশাল একটা জানালা। জানালার পাশে বারান্দায় যাওয়ার দরজা। ওই জায়গাটুকুতে আলো-বাতাস ভালো। মৌনি জানালার সামনের অংশটুকু ব্যবহার করে লিভিং হিসেবে। সেখানে এক ঝাঁক ইনডোর প্লান্ট, দেওয়ালে হরেক রকম কারুকার্য। দুটো বেতের সোফা। ছোট্ট টেবিল। আর একপাশে ইজেল, ক্যানভাস আর তার আঁকাআঁকির সারঞ্জাম টিপটাপ করে গুছানো। কিছুদিন আগে সে শখ করে একটা গ্রামোফোন কিনেছে। গ্রামোফোনে মাঝেমধ্যেই রবিবাবুর গান বাজে। একটা রমণী কিণ্ণর কণ্ঠে গায়,
‘ যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে…’
আজকে অবশ্য গান বাজছে না। জানালার সামনের মেঝেতে কাগজ- রঙ-তুলি ছড়িয়ে গম্ভীর মুখে বসে আছে মৌনি। জানালাটা হাট করে খোলা। বৃষ্টির তালে তালে সফেদ পর্দাটা মৃদুমন্দ উড়ছে। বারান্দা ভেদ করে বৃষ্টির ছেঁড়া ছাঁট এসে পড়ছে প্লান্টগুলোর পাতায়। তাদের দেখে মনে হচ্ছে, বৃষ্টিস্নান করতে পেরে তারা খুবই আমোদিত। মৌনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আরও একবার ফোনে ঢু মারল, শাওন অনলাইনে নেই। এই ফাজিল ছেলে ওমন বেয়াদব কথা বলার পর থেকে উধাও। মৌনি মনে মনে বিরক্ত হয়। তার মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যাখান আর অপেক্ষা এই দুটোতে সে অভ্যস্ত নয়। কিন্তু আজ ঘুরেফিরে এই দুটোই তার কপালে জুটছে। টানা এক সপ্তাহ গোঁয়ারের মতো খেঁটে একটা বইয়ের কয়েক রকমের প্রচ্ছদ এঁকেছে। কিন্তু এখন প্রকাশক বলছে লেখকের প্রচ্ছদ পছন্দ হয়নি। তারা নতুন শিল্পী হায়ার করবে। শুনেই মেজাজটা দাউদাউ করে জ্বলে উঠল মৌনির। এমনই যদি হয় তাহলে স্যাম্পল দেখানোর সময় ‘অতিব সুন্দর অতিব সুন্দর’ বলে হল্লা করার কারণ কী? সময় কী গাছে ধরে? এক সপ্তাহ অর্থ জানে তারা? রাগে-দুঃখে মৌনির কাউকে বেদম পেটাতে ইচ্ছে করছে। মৌনি যখন এইরকম প্রচন্ড রেগে যায়। তখন বরাবরই ধৈর্যের মূর্তি হয়ে সামনে আসে শাওন। প্রশ্রয় দিয়ে বলে,
‘ নাই মামার থেকে কানা মামা ভালো। তুমি বরং সেই লোক ভেবে আমাকে গালি দাও। দেখবে রাগ কমে যাচ্ছে।’
মৌনি অবশ্য খুব বেশি গালাগাল করতে জানে না৷ দুটো তিনটে শব্দ ছাড়া তার গালির ভান্ডার শূন্য। সে তখন করুণ কণ্ঠে শাওনের কাছে সাহায্য চায়। মৌনি শুনেছে শাওন ভয়ংকর গালাগালাজ করতে পারে। পাড়ায় ফুটবল খেলতে গিয়ে অসংখ্যবার শঙ্কাজনকভাবে মারামারি করে এসেছে। অথচ মৌনি তাকে কক্ষনো রাগ করতে দেখেনি। এমন নয় যে শাওনের সাথে তার দেখা-সাক্ষাৎ কম। বরং সব কাজিনের থেকে শাওনের সাথেই তার যোগাযোগ বেশি। ছোটবেলা থেকে তার সাথেই বেড়ে উঠা। খেলাধুলা। অথচ শাওন মৌনির সাথে জ্ঞান হওয়ার পর থেকে কখনও উঁচু স্বরে কথা বলেনি। রাগ করেনি। মৌনির ধারণা, শাওনের রাগ নেই। কিন্তু শাওন বলে তার অল্পতেই রেগে যাওয়ার ব্যাধি আছে। মৌনি অসংখ্যবার তার সাথে ঝুলাঝুলি করেছে,
‘ আমার সাথে একটু রাগ করো। কী করলে তুমি ভয়ংকর রেগে যাবে বলো। আমি সেটাই করব। আমি দেখতে চাই তুমি রেগে গিয়ে কী করো। প্লিজ শাওন প্লিজ।’
শাওন চেষ্টা করেও রেগে যেতে পারেনি। প্রত্যেকবার হেসে ফেলে বলেছে,
‘ তোমার সাথে তো রাগ আসে না। তুমি যা করো সবই মজা লাগে।’
মৌনি প্রত্যেকবার নিজেই রেগে গিয়েছে। ধমক টমক দিয়ে ক্লান্ত হয়ে একসময় মুখ গম্ভীর করে বলেছে,
‘ আচ্ছা, কয়েকটা গালি দাও। আমি কয়েকটা গালি শিখব। এই যুগে গালি শেখা মোস্ট ইম্পোর্টেন্ট।’
শাওন তখনও হেসেছে। সহজ স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেছে,
‘ তোমার সাথে কথা বলতে গেলে সবসময় তুলতুলে কথা আসে মন। কঠিন কথা আসে না। আমার ধারণা, তুমি যদি কখনও আমাকে ভয়ংকরভাবে অপমান করো তারপরও আমি তোমাকে কঠিন করে কিছু বলতে পারব না।’
সেই শাওন কিনা হঠাৎ হাওয়া হয়ে গিয়েছে। মৌনির সাথে অশ্লীল কথাবার্তা বলে ফোন অফ করে বসে আছে। মৌনির মনে হলো সে যেকোনো সময় রাগে স্ট্রোক করে ফেলবে। মৌনি কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে তার মামাতো ভাই কাব্যকে ফোন লাগাল। কাব্য চুয়েটের ছাত্র। মৌনি-শাওন থেকে দুই বছরের ছোট হলেও শাওনের কাছে সে বন্ধুসম এবং মৌনির কাছে ভীত হরিণের অনুরূপ। কাব্য ফোন তুলতেই ধমকে উঠল মৌনি,
‘ এই তোর বেয়াদব ভাইয়ের ফোন বন্ধ কেন? সে নিজেকে কী মনে করে? পুতিন? নাকি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প?’
কাব্য মুখ কাচুমাচু করে বলল,
‘ সম্ভবত মজনু মনে করে।’
মৌনি ধমক দিয়ে বলল,
‘ তুই আমার সাথে ফাজলামো করছিস?’
‘ না আপু। ফাজলামো করছি না। আচ্ছা, সমস্যাটা বলো। শাওন ভাই করেছেটা কী? অন্য কোনো মেয়ের সাথে কথা বলেছে?’
মৌনি চোখ রাঙিয়ে বলল,
‘ সে অন্য কোনো মেয়ের সাথে কথা বললে আমার সমস্যা কী?’
‘ সেটা তো আমি জানি না আপু।’
মৌনি ধমক দিয়ে বলল,
‘ না জানলে বলিস কেন?’
কাব্য মুখ ছোট করে বলল,
‘ আর বলব না।’
‘ শোন, তোর গুণধর ভাইকে বলে দিবি ওর এতো বড় সাহস আমাকে খারাপ কথা বলে! তারপর আবার মুখের উপর ফোন কেটে দেয়! ওর হাড্ডি যদি গুঁড়া না করেছি তবে আমার নাম মৌনি না। আমি এই মুহূর্তে ওকে আমার গুডবুক থেকে ডিলিট করে দিচ্ছি। শাওন নামে কাউকে আমি চিনি না। তার সাহস দেখে আমি স্তম্ভিত। সে যেন আমার সাথে যোগাযোগের কোনো রকম চেষ্টা না করে।’
কাব্য সব বাদ দিয়ে আগ্রহ নিয়ে বলল,
‘ খারাপ কথা বলেছে নাকি? তোমাকে খারাপ কথা বলে থাকলে তো ভয়ানক অন্যায় করেছে। কিন্তু একজেক্টলি কী বলেছে আপু?’
মৌনি ধমক দিয়ে বলল,
‘ সেটা তুই জেনে কী করবি? তোকে খবরটা পৌঁছাতে বলেছি পৌঁছাবি৷’
কাব্য কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল,
‘ আচ্ছা পৌঁছাব। তবে ওর ফোন বোধহয় ট্রেনিং-এর জন্য অফ। খুব সম্ভবত ফোন বাজেয়াপ্ত করে নেওয়া হয়েছে। আপাতত যোগাযোগ সম্ভব না। সম্ভব হলে ভাই আগে তোমার সাথেই যোগাযোগ করবে। তোমার সামনে আমরা কী আর গুণতিতে পড়ি নাকি মৌনি আপা?’
মৌনি অপ্রস্তুত বোধ করল। নানাবাড়ির ভাই-বোনদের মধ্যে এই এক সমস্যা। এরা সুযোগ পেলেই মৌনিকে খোঁচা মারতে ভালোবাসে। তাদের সকলের দৃঢ় ধারণা মৌনি ও শাওনের মধ্যে গভীর কোনো সম্পর্ক চলছে। সেটা খুব সম্ভবত প্রেম। মৌনি কাব্যকে আরও কিছুক্ষণ ধমকা-ধমকি করে ফোন রাখল। এখন তার ফুরফুরে লাগছে। কিছুক্ষণ মনের আনন্দে লেখালেখি করা যেতে পারে। মৌনির সকল কাজের জন্য আলাদা আলাদা জায়গা আছে। বই পড়ে সে বিছানায় বসে। ছবি আঁকে জানালার কাছে বসে। লেখালেখি করার জন্য ফিক্সড জায়গা হলো বারান্দা। এই বারান্দার নাম দেওয়া হয়েছে, লেখ্যোদ্যান। আজ অবশ্য লেখ্যোদ্যানে যাওয়া যাবে না। বাইরে ঝুম বৃষ্টি। বারান্দা ধুয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির জলে। মৌনি বেতের সোফায় বসে কিবোর্ডে মন ডুবাল। আজকাল সে একটা প্রেমের উপন্যাস লিখছে। হালকা ধরনের লেখা। উপন্যাসের এই পর্যায়ে মূল চরিত্রের আগমন ঘটবে। আহামরি কিছু না, খুবই স্বস্তা ধরনের গল্প।
ভীষণ বৃষ্টির দিনে অবন্তী নামের একটি মেয়ে গুণগুন করে গান গাইতে গাইতে চা করছে। চায়ে একটা চুমুক দিতেই দরজায় কলিংবেলের শব্দ। অবন্তী চায়ের কাপ হাতেই দরজা খুলে দেখল অতি সুদর্শন একটা ছেলে বৃষ্টিতে ভিজে নেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটা তার বড় ভাইয়ের বন্ধু। তার ভাইয়ের সাথে একই ইউনিভার্সিটিতে পড়ে । রোজ দেখে অথচ কখনও এতো সুদর্শন মনে হয়নি। আজ কোন জাদুতে সে এতো রূপবান হয়ে গেল অবন্তী বুঝতে পারছে না। অবন্তীকে এই ধাঁধার মধ্যে রেখেই ছেলেটি চমৎকার হেসে বলল,
‘ চা এনেছ? চমৎকার! দরজা না খুলেই চা নিয়ে চলে আসা একমাত্র তোমার পক্ষেই সম্ভব।’
কথাটা বলে ছেলেটি আবার হাসল। এ যেন হাসি নয় তীর। টুপ করে ঢুকে গেল অবন্তীর হৃদয় বরাবর। ছেলেটি বুড়ো আঙুলে কপালের পানি ঝেড়ে হাত বাড়িয়ে বলল,
‘ দাও খুকি। চা খাই।’
অবন্তী স্তব্ধ হাতে চায়ের কাপ এগিয়ে দিল। ছেলেটি তার আধ-খাওয়া চা এক চুমুকে সাবার করে দিতেই….
এই পর্যন্ত লিখতেই মৌনির দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শোনা গেল। কী বিপদ! প্রেম প্রেম ভাবের মধ্যে এমন আপদ কার ভালো লাগে? মৌনি বিরক্ত হয়ে দরজা খুলল। উপন্যাসের মতো একই দৃশ্য। তবে মৌনির দরজার ওপাশে তার ভাইয়ের কোনো বন্ধু নেই। ভেজা গাত্রে স্বয়ং মৌনির বন্ধু দাড়িয়ে আছে। মৌনি মিষ্টিকে ভেতরে আসার জায়গা করে দিয়ে বলল,
‘ তোর সমস্যা কী বল তো? ঝড় তুফান উপেক্ষা করে আমাকে ডিস্টার্ব করতে চলে এসেছিস। আমাকে ডিস্টার্ব করা ছাড়া তোর জীবনে কী আর কোনো লক্ষ্য নেই?’
মিষ্টি বেতের চেয়ারে বসে ল্যাপটপে নজর দিয়ে বলল,
‘ লিখছিলি নাকি?’
মৌনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে অপর চেয়ারে বসল। বলল,
‘ তাই তো মনে হচ্ছে।’
মিষ্টি অপরাধী কণ্ঠে বলল,
‘ বেশি ডিস্টার্ব করে ফেললাম?’
মৌনি হাসল। ল্যাপটপের স্যাটার নামিয়ে রেখে বলল,
‘ উঁহু। খুব বেশি না একটু। এইটুকু করতেই পারিস। কাজ কখনও বন্ধুর থেকে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না। এই মুহূর্তে তুই আমার প্রায়োরিটি লিস্টে প্রথম। এবার বল, কী হয়েছে? মন খারাপ কেন?’
মিষ্টি চমকে তাকাল। হাসার চেষ্টা করে বলল,
‘ মন খারাপ কেন হবে? মন খারাপ না তো। তোকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছিল তাই চলে এসেছি।’
মৌনি দু’হাত প্রশস্ত করে বলল,
‘ তাহলে বসে আছিস কেন? জলদি জড়িয়ে ধর।’
মিষ্টি হেসে ফেলল। এগিয়ে এসে মৌনিকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ লাভ ইউ।’
মৌনি শুধাল,
‘ নাহিদের থেকে বেশি না কম?’
মিষ্টি গভীর কণ্ঠে বলল,
‘ অনেক বেশি।’
মৌনি জিতে যাওয়ার খুশিতে ঝুমঝুম করে উঠল। বলল,
‘ ওহহো! লাভ ইউ মোর মেরি জান। এখন সর। চট করে দু’কাপ চা করে আনি তারপর শুনব তোর মন খারাপের রহস্য। নাহিদের সাথে ঝগড়া হয়েছে?’
মিষ্টি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
‘ নাহিদের সাথে আমার কখনও ঝগড়া হয় না মৌনি।’
মৌনি অবাক হয়ে বলল,
‘ তাই! হাও কুল ডুড! আজকাল তোদের মতো আন্ডারস্ট্যান্ডিং কাপল লাখে একটা। গত চার/পাঁচ বছরে একবারও ঝগড়া হয়নি? তোদের তো এওয়ার্ড দেওয়া উচিত। রিএওয়ার্ডস্ ফর মেন্টেইনিং রিলেশনশিপস্।’
মিষ্টি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
‘ আজকাল আমাদের এই রিলেশনশিপটা আমার কাছে ঠিক রিলেশনশিপ মনে হয় না। নিজেকে খুবই গৌণ মনে হয় এই সম্পর্কে। মনে হয়, আই এ্যাম নাথিং টু নাহিদ।’
মৌনি এবার সচেতন চোখে তাকাল। শুধাল,
‘ মানে? নাহিদ তোকে ইগনোর করে?’
‘ ঠিক ইগনোর না। নাহিদ বরং আমাকে বাড়াবাড়ি রকম গুরুত্ব দেয়। সে কখনও আমার ফোন কাটে না। সবসময় আমাকে এটেন্ড করার চেষ্টা করে। কিন্তু এই অসীম গুরুত্ব দেওয়ার মধ্যেও কোথাও যেন একটা সুর নেই। থাকে না? আমি তোমার খেয়াল রাখি কারণ তোমাকে আমার ভীষণ দরকার? নাহিদের মধ্যে এই ব্যাপারটা নেই। ও আমার খেয়াল রাখে কারণ সে কমিটেড। কারণ অফিশিয়ালি আমি তার গার্লফ্রেন্ড। কিন্তু কাল যদি আমি না থাকি তাতে তার কোনো যায়’ই আসবে না।’
মৌনি প্রত্যুত্তর করার চেষ্টা না করে মিষ্টিকে বুঝার চেষ্টা করল। মিষ্টি বলল,
‘ আমি কোথায় আছি, সে নিয়ে নাহিদের কখনও কোনো মাথাব্যথা নেই। ধর আমি ওকে বললাম, আমি আজ রাতে আমার এক বন্ধুর বাড়িতে থাকব। সে কখনও আমাকে নিষেধ করবে না। আমি যদি বলি, রাত বারোটায় আমি ঘর থেকে বেরিয়ে বন্ধুদের সাথে রাস্তায় হাঁটবো সে কখনও ধমক দিয়ে বলবে না, ইউ আর নট এলাউড। এতো রাতে বাইরে কী? সে বলবে, ওকে, ইঞ্জয়।’
মৌনি হেসে ফেলল। শুধাল,
‘ নিষেধ করে না বলে ভালোবাসে না? তুই চাস ও তোকে নিষেধ করুক? ধমক দিক। আটকে রাখুক?’
মিষ্টি অস্থির হয়ে বলল,
‘ তা নয়। কিন্তু তারপরও একটা অধিকারবোধ থাকে না? অন্যদের প্রেমিকদের দেখ, তারা তার ভালোবাসার মানুষের প্রতি যে অধিকারবোধ দেখায় সেটা নাহিদের মধ্যে নেই। সে কখনও কোনো কিছুতে নিষেধ করে না। আমি কী পোশাক পরলাম। কীভাবে পরলাম তাতে তার কোনো মাথাব্যথাই নেই।’
‘ তুই এমনিতেই ডিসেন্ট পোশাক পরিস। এজন্যই ওর নিষেধ করার প্রয়োজনই পড়ে না।’
‘ ডিসেন্ট না পরলেও কিছু বলতো না।’
‘ তাতে তো তোর খুশি হওয়া উচিত, নাহিদ রেসপেক্টস্ ইউর জাজমেন্টস্। আজকালের ছেলেদের মতো কন্ট্রোলিং নয়।’
মিষ্টি অসহায় কণ্ঠে বলল,
‘ কন্ট্রোলিং না হাওয়া আর ভালোবাসাহীনতা দুটো আলাদা জিনিস মৌনি।’
মৌনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
‘ আচ্ছা, তুই আমাকে বুঝানোর চেষ্টা কর। আমি ব্যাপারটা বুঝার চেষ্টা করছি।’
মিষ্টি বলল,
‘ আমাদের সম্পর্কটা যেন ওই কোচিংয়ের দিনগুলোতেই আটকে আছে। সেই ছেলেমানুষি প্রেম। আসলে প্রেমও না। এটাকে কী বলে? শুধু কথা বলা? দু’জন বন্ধুর মধ্যে যা হয়। নাহিদ কখনও আমাকে দেখার জন্য অস্থির হয় না।’
‘ তুই তো ওকে দেখাই দিস না।’
‘ ওর মধ্যে প্রবল ইচ্ছেটাও তো নেই মৌনি। আমি মানা করলে সে কেন জোর করে না? হি নেভার ওয়ান্টেড টু কিস মি। আমাদের কথা কখনও স্বাভাবিকের মাত্রা ছাড়িয়ে গভীরে যায়নি। নাহিদ কখনও সীমালঙ্ঘন করার চেষ্টা করেনি। অথচ আমরা দু’জনেই এডাল্ট।’
মৌনি এবার হেসেই ফেলল,
‘ তুই চাস নাহিদ তোর সাথে এডাল্ট কথা বলুক। ইয়া মা’বুদ!’
মিষ্টি মুখ গম্ভীর করে বলল,
‘ হাসবি না। ব্যাপারটা হাসির নয়। আমি তোকে বুঝাতে পারছি না। আমি তোকে শুধু নাহিদের আমার প্রতি নিস্পৃহতার ব্যাপারটা বুঝাতে চাইছি। ওর আমার প্রতি কোনো আগ্রহই নেই।’
মৌনি হাসি চেপে মুখ গম্ভীর করে বলল,
‘ আচ্ছা, বেশ। হাসব না৷ বল, তারপর?’
‘ আমার মনে হয় নাহিদের আমাকে নিয়ে কোনো ভবিষ্যত পরিকল্পনা নেই। বিয়ে, সন্তান এসব ওর চিন্তার মধ্যেই নেই। ওর ঠিক কোন চিন্তার মধ্যে আমি আছি এটাই আমি খুঁজে পাই না মৌনি। নাহিদ কী চায়, সেটা বোধহয় সে নিজেও জানে না। ও আদৌ আমাকে ভালোবাসে কি-না এই জ্ঞানও তার আছে বলে আমার মনে হয় না।’
মৌনি ফুস করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘ বুঝলাম। তা নাহিদ যে তোকে ভালোবাসে না সেটা তুই কবে বুঝলি? ঈশানের সাথে কথা হওয়ার পর?’
মুহূর্তেই ফ্যাকাশে হয়ে গেল মিষ্টির মুখ। দুর্বল কণ্ঠে বলল,
‘ ঈশানের জন্য নয়। আমি অনেকদিন ধরেই…’
প্রিয় বান্ধবীর সাথে আর মিথ্যা বলা সম্ভব হলো না মিষ্টির। হতাশ কণ্ঠে বলল,
‘ ঈশানের সাথে কথা বলার পর আমি বুঝলাম নাহিদের প্রতি আমার যা ছিল তা আসলে প্রেম না। শুধু যে নাহিদেরই অনুভূতি নেই এমন না। নাহিদের একার দোষ নেই। আমি যে নাহিদের প্রতি তীব্র কোনো অনুভূতি পোষণ করি তেমনও না। নাহিদ কোথায় যাচ্ছে, তার লাইফে কী হচ্ছে সেগুলো আমাকে খুব একটা চিন্তিত করে না। আলোড়িত করে না। তুই বুঝতে পারছিস?’
‘ পারছি।’
মৌনি শুধাল,
‘ ঈশানের প্রতি তোর এই অনুভূতিগুলো হয়? তীব্রভাবে?’
‘ তীব্রভাবে হয় কি-না জানি না। তবে হয়।’
মৌনি প্রত্যুত্তরে কিছু বলল না। মিষ্টি করুণ কণ্ঠে বলল,
‘ আমার এখন কী করা উচিত বল তো? নিজেকে আমার খুব ছোট মনে হচ্ছে মৌনি। একজনের সাথে কমিটেড থাকা অবস্থায় অন্যজনের প্রতি দুর্বল হওয়া ঘৃণ্য একটা কাজ। এই ঘৃণ্য কাজটা আমি করে ফেলেছি ভেবে নিজেকে অসহ্য লাগে আমার। আবার এই অদম্য আকর্ষণ থেকে বেরিয়েও আসতে পারি না। এই দু-টানায় আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি মৌনি। জাস্ট পাগল হয়ে যাচ্ছি।’
মৌনি অনেকটাক্ষণ চুপ থেকে বলল,
‘ এতো হাইপার হওয়ার কিছু নেই মিষ্টি। এমন হয়। ইট’স ওকে। হতে পারে তোর ধারণাই ঠিক। তোরা কখনও ভালোবাসার মধ্যে ছিলিই না৷ বিয়ের মতো বড় কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার আগে এই উপলব্ধি হয়ে গিয়েছে, এটাও একটা ভালো কথা। নয়তো সিচুয়েশন আরও খারাপ হতে পারত। আমি তোকে বলব, তুই কয়েকটা দিন সময় নে। ঈশান এবং নাহিদ দু’জনের সাথেই যোগাযোগ বন্ধ করে নিজের সাথে সময় কাটা। দেখ, তোর মন কী চায়, কাকে চায়। তারপর সিদ্ধান্ত নে। যদি নাহিদের সাথে সম্পর্ক ভাঙিসই তাহলে প্লিজ আগে ওর সাথে সম্পর্কটা পাকাপাকিভাবে ভেঙে তারপর কয়েকটা দিন সময় নিয়ে ঈশানের সাথে জড়া। নয়তো নাহিদের জন্য ব্যাপারটা খুব কঠিন হবে। ভালোবাসুক বা না-বাসুক ওর মেইল ইগো হার্ট হবে। কনফিডেন্স ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। ডোন্ট ডু দিস টু হিম, মিষ্টি।’
মৌনির শেষ কথাগুলো খুব বিষণ্ণ শুনাল মিষ্টির কানে। আচমকা মনে পড়ল, নাহিদ মৌনিরই ভাই। ভাইয়ের আসন্ন বিষণ্ণতার কথা মাথায় রেখেও মিষ্টিকে বুঝার চেষ্টা করার জন্য কৃতজ্ঞতায় ভরে গেল মিষ্টির মন। ফিসফিস করে বলল,
‘ তুই একটা চমৎকার মেয়ে মৌনি।’
মৌনি প্রত্যুত্তরে হাসার চেষ্টা করল। কিন্তু পারল না। মনে মনে প্রার্থনা করল, হে বিধাতা! এই দুটোকে তুমি ভালো রেখো। মিষ্টি যেন নাহিদেরই হয়। যদি না হয় তবে যেন দু’জনই চমৎকার কাউকে পায়। কারো ভাগ্যে দুঃখ না আসুক। সবার একটা মন ভালো হওয়ার গল্প হোক৷

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট