সাতক্ষীরা ও সিলেটে বন্যা দুর্গত মানুষের জন্যও ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মেহমানখানার আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া, তুরস্কের ভয়াবহ ভূমিকম্প, মরক্কোর ভূমিকম্পসহ নির্যাতিত গাজাবাসীর জন্য প্রথমে মিসরে মেহমানখানা খোলা হয়। বর্তমানে গাজায় চলছে মেহমানখানার উদ্যোগে জরুরি খাবার পরিবেশন
চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দার হাট এলাকায় শ্রমিকের কাজ করেন ষাটোর্ধ্ব জিয়া উদ্দিন। দুপুরের খাবার তাকে বাইরেই খেতে হয়। কিন্তু শ্রমের বিনিময়ে আয় এবং পরিবারের খরচের হিসাব মেলাতে পারেন না। তাই দুপুরের খাবারের জন্য তিনি মেহমান হন চান্দগাঁও থানাধীন গোলাম আলী নাজির পাড়ার আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন কমপ্লেক্সের বিনামূল্যের খাবারের আয়োজন করা মেহমানখানায়। এতে তার আয়ের একটি অংশ সাশ্রয় হয়। কেবল জিয়া উদ্দিন নন, এভাবে প্রতিদিন অন্তত অর্ধশত শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষ, বৃদ্ধ ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এই মেহমানখানায় বিনামূল্যে দুপুরে খাবার গ্রহণ করেন।
জানা যায়, ২০২০ সালের ১৫ আগস্ট বৈশ্বিক মহামারি করোনা চলাকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকীর দিন শুরু হয় ‘ক্ষুধার্থ মানুষের জন্য’ শিরোনামে মেহমানখানার এ আয়োজন। এরপর থেকে এখনো চলছে এ আয়োজন। প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে ক্ষুধার্ত মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে মেহমানখানায় খেতে আসেন। শুরুর দিকে দৈনিক ২০০ মানুষের জন্য এখানে রান্না হতো। বর্তমানে মেহমানের উপস্থিতির ওপর দৈনিক কম বেশি অর্ধশত মানুষের জন্য রান্না হয়। মেহমানখানার পরিধি দেশের বিভিন্ন জেলা পেরিয়ে দুর্যোগকালীন সময়ে বিভিন্ন দেশেও বিস্তৃত হয়েছে।
দুপুরে খেতে আসা কিশোর কামাল উদ্দিন বলেন, আমি চান্দগাঁও এলাকায় থাকি। প্রতিদিন দুপুরে এখানে ভাত খেতে চলে আসি।
আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, করোনার সময় দেখলাম দুপুরে অনেক মানুষ না খেয়ে থাকছেন। আমার এলাকায়ও এমন চিত্র দেখলাম।
তাছাড়া, তখন আমাদের ফাউন্ডেশনে স্বল্প পরিসরে খাবারের আয়োজন ছিল। তখনকার পরিস্থিতি দেখে আমরা ২০২০ সালের ১৫ আগস্ট থেকে দুপুরে ক্ষুধার্ত মানুষদের জন্য মেহমানখানায় খাবারের আয়োজন শুরু করি। সে থেকেই এটি এখনো চালু আছে। তিনি বলেন, দেশে দুর্যোগকালীন সময়েও বিভিন্ন জেলায় এবং বিদেশেও মেহমানখানা চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আপদকালীন সময়ে এক বেলা খাবারের ব্যবস্থা করে অসহায় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি। আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশনটি সরকার অনুমোদিত মানবিক সংস্থা।
অনেক মানবিক উদ্যোগের মধ্যে মেহমানখানা অন্যতম একটা উদ্যোগ।
জানা যায়, মেহমানখানায় প্রতিদিন নানা আয়োজন থাকে। তবে গত তিন বছর বর্ষপূর্তিতে অসহায় মানুষের জন্য বহু পদের রান্না নিয়ে বিনামূল্যে ব্যুফে আয়োজন করা হয়েছিল। তাছাড়া মেহমানখানায় নিয়মিত মেহমান হন চট্টগ্রাম শহরের আসা শিক্ষার্থী, রোগী ও ভর্তিইচ্ছু শিক্ষার্থীরা। দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থী ও রোগীরা মেহমানখানার মুসাফিরখানায় বিনামূল্যে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
অন্যদিকে, মেহমানখানায় প্রতিবছর পবিত্র রমজানের ৩০ দিনব্যাপী উন্মুক্ত ইফতার ও সাহরির ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। তাছাড়া, দুর্যোগকালীন সময়ে চট্টগ্রাম নগর এবং আশপাশের দুর্গত এলাকায় সাময়িক সময়ের জন্যও পরিচালনা করা হয় এ মেহমানখানাটি।